এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া »
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষার ব্যাপক চাষ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। মৌমাছিদের গুনগুন শব্দে এখন মুখরিত সরিষার মাঠগুলো। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন পেয়েছে কৃষকেরা। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার অন্তত আড়াই হাজার কৃষক। অপরদিকে চকরিয়া উপজেলার দিগন্ত জুড়ে ফুটিয়ে তোলা সরিষা ক্ষেত এখন সর্বসাধারণের কাছে দর্শনীয় স্থান হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি অফিসার রাজীব দে বলেন, চলতি মৌসুমে রবি ফসল উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় ৫০০ হেক্টর (১২৫০ একর) জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাহারবিল ইউনিয়নে ১৫০ হেক্টর, পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নে ১০০ হেক্টর, বদরখালী ইউনিয়নে ৫০ হেক্টর, চিরিঙ্গা ইউনিয়নে ৫০ হেক্টর ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নে ৬০ হেক্টর ও চকরিয়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ এখন কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চকরিয়া উপজেলার ৫০০ হেক্টর (১২৫০) একর জমিতে এবছর প্রায় ৭৫০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চকরিয়া সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী এলাকার কৃষক আহমদ উল্লাহ বলেন, এবার ৪০ শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার বাম্পার ফলন পেয়েছে। এছাড়াও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক ফজল কাদের, পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের কৃষকক কামাল উদ্দিন, নাজেম উদ্দিন, চকরিয়া পৌরসভার আমানচর এলাকার কৃষক আবদুল খালেক ও আবুল হোসেন বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে খরচ কম। জমিতে বেশি পরিশ্রম করা লাগেনা। কম সময়ের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। তাতে লাভও হয় বেশি। চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম নাছিম হোসেন বলেন, উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম ও দাম ভালো পাওয়ায় সরিষা চাষে কৃষকক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। চলতি মৌসুমে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া সরিষা চাষের উপযোগী হওয়ায় গত বছরের মতো এবারও সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, চাষ শুরু করার আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সরিষা চাষে জড়িত কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে সার, বীজ বিতরণ ও মজুরি খরচ নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। উপজেলার অন্তত আড়াই হাজার কৃষক সরিষা চাষে সরকারি সহায়তা পেয়েছেন। কৃষিবিদ এসএম নাছিম হোসেন আরও বলেন, সরিষা চাষে বাড়তি জমির প্রয়োজন হয়না। শীতের শুরুতে আমন ধান ও সবজি কাটা শেষ হওয়া মাত্র সময়ে সরিষা আবাদ করা হয়। দুইমাসের মধ্যে সরিষা তুলে নিয়ে একই জমিতে পুনরায় বোরো চাষ শুরু করেন কৃষককেরা। অর্থাৎ সরিষা উৎপাদনের কারণে একবছরে তিন ফসলী জমি এখন চার ফসলীতে রূপান্তরিত হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি পরিবারের জন্য সরিষা তেলের ঘাটতি পুরণ করতে সফল হচ্ছেন কৃষককেরা।