চকরিয়া : অবশেষে সচল হলো মাতামুহুরী নদীর রাবার ড্যাম

৬০ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ নিশ্চিত

মেরামত শেষে সচল হলো মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা পয়েন্টের রাবার ড্যাম। গতকাল তোলা ছবি -সুপ্রভাত

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া  »

১৭ ডিসেম্বর দুপুরে বাতাস ঢুকিয়ে ফুলানোর সময় তিন নম্বর স্পেনের গোড়ালি খুলে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা পয়েন্টের রাবার ড্যাম মেরামত শেষে অবশেষে সচল হয়েছে। একইসঙ্গে সচল করা হয়েছে নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টের রাবার ড্যামও।

মৌসুমের শুরুতে মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা পয়েন্ট ও ১০ দিনের মধ্যে খুলে যাওয়া স্পেনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত শেষে পালাকাটা পয়েন্টের রাবার ড্যাম দুটি ফুলানোর মাধ্যমে মিঠাপানির সেচ সুবিধার উৎস নিশ্চিত হওয়ায় চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে বোরো ও রকমারি সবজি চাষাবাদ নিয়ে কৃষকদের আতঙ্ক উৎকন্ঠা কেটে গেছে। এতে দুই উপজেলার লক্ষাধিক কৃষক ইতোমধ্যে পুরোদমে চাষের কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম নাছিম হোসেন।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয়  প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন আহমদ  বলেন, ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার চকরিয়া উপজেলাকে সবুজ বিপ্লবের আওতায় আনতে কৃষকের সেচ সুবিধা নিশ্চিতকরণে মিঠাপানির উৎস ধরে রাখতে  সর্বপ্রথম মাতামুহুরী নদীর দুই পয়েন্টে অস্থায়ী ভিত্তিতে ক্রসবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এরই প্রেক্ষিতে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের বিপরীতে প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে নদীর বাঘগুজারা ও রামপুর পালাকাটা পয়েন্টে অস্থায়ী মাটির বাঁধ তৈরি করে মিঠাপানি আটকিয়ে অবিভক্ত চকরিয়া (পেকুয়াসহ) উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ নিশ্চিত করে আসছিলেন। যা ২০০৭ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল।

তিনি বলেন, প্রতিবছর অস্থায়ী ক্রসঁবাধ নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় নদীর দুই পয়েন্টেই স্থায়ীভাবে রাবার ড্যাম স্থাপনের উদ্যোগ নেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। ২০০৯ সালে মাতামুহুরী সেচ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থায়ীভাবে রাবার ড্যাম দুইটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে রাবার ড্যাম ফুলানোর মাধ্যমে কৃষকদের মিঠাপানির সেচ সুবিধা দিয়ে আসছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানতে চাইলে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলার শাখা অফিসার উপ সহকারি প্রকৌশলী (এসও) মো: আরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমের শুরুতে গত ১৯ ডিসেম্বর মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টের রাবার ড্যাম স্বাভাবিক ভাবে ফুলোনা হয়েছে। এরপর ১৭ ডিসেম্বর নদীর পালাকাটা পয়েন্টের অপর রাবার ড্যামটি ফুলানোর সময় অসাবধান বশত ড্যামের তিন নম্বর স্পেনের গোড়ালি খুলে গিয়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, টানা ১০ দিন পাউবোর যান্ত্রিক বিভাগের প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা মেরামত কাজ করে গতকাল ২৯ ডিসেম্বর রাতে পালাকাটা পয়েন্টের রাবার ড্যামটি অবশেষে সচল করতে সক্ষম হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল সোমবার সকাল থেকে মাতামুহুরী নদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে চলছে।

এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম নাছিম হোসেন বলেন, যথাসময়ে রাবার ড্যাম দুটি ফুলানো সম্ভব হওয়ায় চলতি মৌসুমে চাষাবাদে মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিয়ে কৃষকদের শঙ্কা কেটে গেছে। ফলে সেচ পাম্পের (স্কিম) মাধ্যমে দুই উপজেলার ৬০ হাজার একর জমিতে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চাষাবাদ করতে পারবে কৃষকেরা।

রাবার ড্যাম দুটি অবশেষে সচল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তিনি বলেন,  পাউবোর লোকজন চলতি মৌসুমে যথাসময়ে রাবার ড্যাম দুটি ফুলানোর উদোগ নেন। কিন্তু বাঘগুজারা পয়েন্টের ড্যামটি স্বাভাবিক ভাবে ফুলানো সম্ভব হলেও পালাকাটা পয়েন্টের রাবার ড্যামটি ফুলানোর সময় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ অবস্থায় মিঠাপানির সেচ সংকটের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশে মেরামত কাজ সম্পন্ন করে রোববার রাতে অবশেষে রাবার ড্যামটি সচল করেছে। তাঁর আগে চালু করা হয়েছে বাঘগুজারা পয়েন্টের রাবার ড্যাম।

এখন স্থানীয় কৃষকের চাষের জমিতে মিঠাপানির সেচ সুবিধায় তৈরি হওয়া বিপদ কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও আতিকুর রহমান।