চকরিয়ায় আমন চাষে অভাবনীয় সাফল্য: খুশি কৃষক

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরা। চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের কৃষক লিয়াকত আলীর ধানক্ষেত থেকে তোলা ছবি— সুপ্রভাত

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া  »

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ৪৮ হাজার ১৬৫ একর জমিতে চলতি মৌসুমে আমন চাষে সুপার বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নেওয়া পরিকল্পনা মোতাবেক মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক নির্দেশনার আলোকে রোগবালাই সহনশীল জাতের ধান রোপনের ফলে আমন চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছে ফসলের ক্ষেত। তাতে অতীতের সকল সময়ের রেকর্ড ভঙ্গ করে চলতি মৌসুমে ধানের ফলন হয়েছে আশানুরূপ। এতে করে এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে কৃষকেরা কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার ধান (খাদ্যশস্য) উৎপাদনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় আমন চাষে আশাতীত সাফল্য পেতে যাচ্ছেন কৃষকরা। আমন চাষে অভাবনীয় এই সাফল্যে উপজেলায় আগামী দিনে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা থাকবে না বলে অভিমত জানিয়েছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই আগস্ট মাসে আমন চাষ শুরু করেন কৃষকেরা। বর্তমানে  উপজেলার দিগন্তজুড়ে সোনালি ধান কাটায় পুরোদমে সময় ব্যয় করছেন কৃষকেরা। ইতোমধ্যে ধান মাড়াই ও শুকানোর জন্য মাঠ তৈরির কাজও শুরু করেছেন। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই কৃষকেরা জমি থেকে সব ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করেছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।

এদিকে এবছর আমনের বাম্পার ফলনে উপজেলার সর্বত্র প্রান্তিক কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। আর শীতের আগমনে নবান্নের উৎসব ঘিরে কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে পিঠা—পুলি তৈরির আগাম প্রস্তুতি।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (নিরীক্ষা) রাজীব দে বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৮ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ৪৮ হাজার ১৬৫ একর (১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর) জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তার মধ্যে ৪০ হাজার ৩৯৫ একর জমিতে উফশী জাতের এবং ৭ হাজার ২৮৫ একর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেন কৃষকরা।

উফশী জাতের ধানের মধ্যে বিধান তেত্রিশ, উনচল্লিশ, উনপঞ্চাশ, তিয়াত্তর, পচাত্তর ও সাতাশি রয়েছে। এরমধ্যে বেশি আবাদ এবং বাম্পার ফলন হয়েছে বিধান পচাত্তর জাতের ধান চাষে। এছাড়া হাইব্রিড ধানের মধ্যে চাষ হয়েছে ধানীগোল্ড, সেরা ও  ৭০০৬ জাতের।

তিনি আরও বলেন, জুলাই আগস্ট মাসের দিকে কৃষকরা আমন চাষাবাদ শুরু করেন। রোপনের চারমাস পর চলতি নভেম্বর মাস থেকে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটার উৎসব।  ইতোমধ্যে উপজেলার ৬০ ভাগ জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। আশা করা হচ্ছে, ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে আমন কাটা শেষ হবে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো.মহিউদ্দিন বলেন, আমনের বীজতলা তৈরি এবং জমিতে চারা রোপণ পরবর্তী সময়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন এর পরিকল্পনা মোতাবেক মাঠপর্যায়ে কর্মরত উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মনিটরিং ও সঠিক নির্দেশনায় কৃষকরা জমিতে পরিমাণ মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে নিবিড় পরিচর্যা করেছেন। এছাড়া পোকামাকড় দমনে পাচিং পদ্ধতি, আলোকফাঁদসহ বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহণ করেছে, সেই কারণে এবছর আমনে বাম্পার ফলন হয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল অনুকূলে। বড়ধরণের দুর্যোগ বা বৈরী পরিস্থিতি না থাকার কারণে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন কৃষকরা।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম নাছিম হোসেন বলেন, আমন চাষের শুরু থেকে কাটার আগমুহূর্ত পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে কর্মরত উপ—সহকারি কর্মকর্তারা চাষের ক্ষেতে সংশ্লিষ্ট কৃষককে বিভিন্নভাবে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। জমিতে কোন ধরনের রোগ—বালাইয়ের উপস্থিতি দেখলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। মূলত সবার দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে এবছর আমনে আশাতীত সাফল্য অর্জন হয়েছে।

তিনি বলেন, এবার প্রতিহেক্টর জমিতে পাঁচ মেট্টিক টন খাদ্যশস্য (ধান) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাম্পার ফলনে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর (৪৭ হাজার ১৬৫ একর) জমিতে ৯০ থেকে ১০০ হাজার মেট্টিক টন ধান উৎপাদন হতে পারে এমনটাই আশা করা যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিটন ধান সরকারি মূল্যে ৩২ থেকে ৩৩ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে, সেই হিসেবে উৎপাদিত ধানের মূল্য দাঁড়াবে ২০০ কোটি টাকার মতো।