নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ তীব্র বেগে ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। তাই কক্সবাজার উপকূলজুড়ে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কারণ ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার জেলা হয়েই স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে। তাছাড়া দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র সতর্কবার্তা দিয়ে বলছে, উপকূলে আঘাত হানার সময় ব্যাপক বিধ্বংসী রূপ নিতে পারে ‘মোখা’। তাই ভয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়তে শুরু করেছেন অনেক বাসিন্দা।
এদিকে ‘মোখা’র ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা ও জানমাল রক্ষায় তৎপরতা শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রস্তুত করা হচ্ছে হাজার হাজার সাইক্লোন সেন্টার ও আশ্রয়কেন্দ্র। মজুত করা হচ্ছে শুকনো খাবারসহ আনুষঙ্গিক মালামাল। উপকূলীয় জেলা-উপজেলায় দফায় দফায় বৈঠক করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র খবর শুনে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়তে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। যারা এখনো বসতভিটায় রয়েছেন তারাও আছেন ভয়ে। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্বীপের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাগরের বুকে জেগে ওঠা এই প্রবাল দ্বীপসহ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদের তীরে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন বলছে, দুর্যোগে স্থানীয়দের জন্য উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি ৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও ডাকবাংলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ জোন হিসেবে সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপের জন্য নৌবাহিনীসহ বিজিবি, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, মেডিক্যাল টিমসহ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে হোটেল-মোটেলসহ অর্ধশতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হটলাইন খোলা হয়েছে। বিশেষ করে দুই দ্বীপের (সেন্টমার্টিন ও শাহপরী) বাসিন্দাদের সচেতনতার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য আগে থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সংস্থার আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। বিশেষ করে দ্বীপের লোকজন যাতে আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা, স্কুল, আবহাওয়া অফিস, ডাকঘর, হোটেলগুলো খোলা রাখতে বলা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, ইতোমধ্যে কিছু মানুষ দ্বীপ ত্যাগ করেছে। আমরাও ভাবছি পরিবার নিয়ে টেকনাফে চলে যাব। ঘূর্ণিঝড় এলে নিচু এলাকা হিসেবে দ্বীপে আঘাত হানতে পারে, কেননা, সাগরের মাঝে আমাদের বসতি। এ ছাড়া আগের তুলনায় দ্বীপের অবস্থা ভালো না। সাগরে সামান্য পানি বাড়লে দ্বীপের চারদিক ভেঙে যায়। শুনেছি, ঘূর্ণিঝড় মোখা শক্তিশালী। তাই আমার মতো দ্বীপের সবাই ভয়ে আছেন।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, উপকূলের লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার সেই পরিস্থিতি এখনো হয়নি। তবে দ্বীপবাসীকে সতর্ক থাকতে প্রত্যেক গ্রামবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রসহ হোটেলগুলোতে দ্বীপে সিপিপির ১৩০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুুতি নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। জেলায় ৫৭৬ সাইক্লোন সেন্টার পরিষ্কার করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলার ২০ লাখ নগদ টাকা, ১৫০ টন চাল, তিন টন বিস্কুট, তিন টন শুকনো কেক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান জানান, শুকনো খাবারসহ আনুষাঙ্গিক মালামাল উপজেলায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পানি বিশুদ্ধ করণ ওষুধও সরবরাহ করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলায় পাঁচ টন চাল পাঠানো হয়েছে। কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফে দেড় লাখ নগদ টাকা পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ৪৯০ টন চাল, নগদ ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন মজুত রয়েছে। আরো পাঁচ লাখ টাকা ও পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
সেন্টমার্টিনের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ শুক্রবার সকালে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত এ ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হয়ে কক্সবাজারের দিকে ধেয়ে আসছে। গতকাল বেলা পৌনে ৩টার দিকে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। এ অবস্থায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
একইসঙ্গে সেন্টমার্টিন থেকে পর্যটকসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের ইতোমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় দ্বীপবাসীদের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা যেহেতু কক্সবাজার-সেন্টমার্টিনমুখী, তাই কক্সবাজারসহ সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্যই সেন্টমার্টিনের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি সেন্টমার্টিন থেকে বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা ও পর্যটকদের ইতোমধ্যে সরিয়ে এনেছি আমরা।