নিজস্ব প্রতিবেদক »
সর্বত্র ঘন কুয়াশা জানান দিচ্ছে চট্টগ্রাম জুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। সূর্যের দেখা মিলছেনা মধ্য দুপুরেও। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ঘন কুয়াশার কারণে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। ঠা-াজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। তীব্র শীত থেকে মুক্তি পেতে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে বাড়ির আশে পাশে আগুন পোহাতেও দেখা গেছে। তবে নগরেও কোথাও কোথাও রোদ ও আগুন পোহাতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে। সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘এটাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা যায় না। কেননা, কোনো স্থানে পর পর ৩দিন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলে। যেহেতু চট্টগ্রামের স¦াভাবিক তাপমাত্রা ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে শীতকালে এবং এখন তা আছে ১৫ডিগ্রি সেলসিয়াস; সুতরাং এটিকে শৈত্যপ্রবাহ বলা যাচ্ছেনা। তবে গত দিনের তুলনায় ঠা-া বেড়েছে। কুয়াশার পরিমাণও ছিলো অনেকটা বেশি। এটি আগামী ৪-৫দিন থাকবে। তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করবে। এছাড়া এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে শৈত্যপ্রবাহের কোনো পূর্বাভাস নেই।’
এদিকে শীত বাড়ার কারণে বেড়েছে ঠা-াজনিত বিভিন্ন রোগ। তারমধ্যে আছে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, একিউট ব্রঙ্কাইটিস, সিওপিডি বা হাঁপানি। এছাড়া রয়েছে সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বর। এ সময় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যালের নার্সিং সুপারিটেনডেন্ট ইনসাফি হান্না বলেন, ‘শীত বাড়ার কারণে তুলনামূলকভাবে ডেঙ্গুর রোগী কমেছে। আগে নিয়মিত ৪০-৪৫ জন ডেঙ্গুরোগী থাকতো। কিন্তু এখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১১জন। করোনার রোগীও নেই। করোনা সাসপেক্টেডও নেই। তবে শিশুদের নিউমোনিয়া ,বয়স্কদের সিওপিডি বা হাঁপানি রোগ বেড়েছে। মেডিক্যালে এসব রোগীও বেশি। তাছাড়া স্ট্রোকের রোগীও বেড়েছে।’
এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, ‘প্রতিবছরই শীতকালে শ্বাসকষ্ট জনিত ফুসফুসের রোগ বেড়ে যায়। যেগুলো আমরা অ্যাজমা বা সিওপিডি বলি এসব যাদের আছে তার মাত্রাটা বাড়ছে। এছাড়া সিজনাল ভাইরাস ইনফেকশন বেড়ে যাচ্ছে। কারো কারো দীর্ঘমেয়াদি কাশি হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে জ্বর সর্দি কাশি হচ্ছে। জ্বর ৪ থেকে ৫দিনের মধ্যে সেরে গেলেও কাশি সারছেনা। যারা গ্রামের বাড়িতে বা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছেন তারা সেভাবে ঠা-া থেকে নিজেদের বাঁচার সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন না; আর তাই ঠা-া লেগে যাচ্ছে। তাই ভোর থেকে সকাল ৯টা, ১০টা পর্যন্ত বা বিকেলের পরে হাঁটতে বের হলে ঠা-া থেকে সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া এ সময় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়াই ভালো।
শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘শিশুদের নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কো নিউমোনিয়া ,অ্যাজমা এগুলোর প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। এ সময় শিশুদের ভ্রমণ কম করা দরকার। করলেও যাতে ঠা-া না লাগে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। নবজাতক থেকে শুরু করে ২ বছর বয়সী শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানো পরিহার করা যাবেনা। তাদের প্রতিদিন গোসল না করিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে গা মুছিয়ে দিতে হবে। ২ থেকে ৩দিন অন্তর কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো যাবে। জ্বর, সর্দি, কাশি হলে, বুক দেবে গেলে, শ্বাসের গতি বেড়ে গেলে, খেতে না চাইলে দ্রুত ডাক্তারের পরার্মশ নিতে হবে। সরকারি যে টিকা গুলো আছে সেগুলো নিতে হবে।’ এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে রয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। এ বিষয়ে হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ বলেন,‘ কুয়াশায় দৃষ্টিসীমার মধ্যে থামানো যায় এমন ধীরগতিতে সর্বদা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হবে। ফগ লাইট বা পার্কিং লাইট জ¦ালিয়ে রাখতে হবে। লেন পরির্বতন বা ওভারটেকিং করা যাবেনা।’