বিষয়টি অনেকের কাছে বাড়াবাড়ি বলে মনে হতে পারে। তারা হয়ত বলতে পারেন, নগরেই যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা অপসারণ নিয়ে নাগরিক ভোগান্তির শেষ নেই সেখানে পৌরসভা তথা গ্রামাঞ্চলের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাববার অবকাশ কোথায়! তারপরও দেখা যাক সেখানকার অবস্থাটি কী!
পত্রিকার খবরে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের ১৪টি পৌরসভার নয়টিতেই ভাগাড় (ল্যান্ডফিল) নেই, ১০টি পৌরসভায় নেই সেকেন্ডারি স্টেশন। যেসব পৌরসভায় ভাগাড় ও সেকেন্ডারি স্টেশন আছে, সেগুলোর একটিরও পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। অথচ স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, বর্জ্য অপসারণ ও ডাম্পিং ব্যবস্থাপনা প্রতিটি পৌরসভার অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব।
চট্টগ্রামের এসব পৌরসভায় প্রতিদিন প্রায় ১৬০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, এর মধ্যে সংগ্রহ করা হয় মাত্র ১২৮ টন বর্জ্য। বাকি ৩২ টন বর্জ্য প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে সড়কের ধারে, খোলা জায়গায় কিংবা লোকালয়ের পাশের অস্থায়ী ভাগাড়ে। কোথাও আবার ড্রেন ও খালে গিয়েও জমছে এসব আবর্জনা। এতে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে তীব্র দুর্গন্ধ, জমে থাকা ময়লা থেকে জন্ম নিচ্ছে জীবাণু ও মশা।
তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভাগুলোর সরবরাহকৃত তথ্য অনুযায়ী, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পৌরসভাগুলোর বার্ষিক বরাদ্দ প্রায় ৫ কোটি টাকা। এ বর্জ্য সংগ্রহে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন ৪২৭ জন সংগ্রহকারী। তবে অনেকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি নেই, স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়মিত হয় না। হাতের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় গ্লাভস, গামবুট, মাস্ক ও হেলমেট প্রদানও সীমিত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হচ্ছে ১২০টি যানবাহন, যার মধ্যে রয়েছে ট্রাক্টর, ভ্যান, হ্যান্ড ট্রলি ও ট্রাক।
উন্মুক্ত স্থানসহ যেখানে-সেখানে ফেলা এসব বর্জ্য থেকে প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েডসহ নানা রোগ–ব্যাধি। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ঝুঁকি আরও বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে রোগবালাই ব্যাপক হারে বাড়ছে।
বায়ু দূষণ বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা। বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে বায়ু দূষণ নগর থেকে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে। এসব নিয়ে তৎপর না হলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে।