সুপ্রভাত ডেস্ক »
বিদ্যুতের পর এবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এল সরকারের নির্বাহী আদেশে। এ দফা শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ১৯ টাকা পর্যন্ত। নতুন দাম ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। খবর বিডিনিউজের।
তবে গৃহস্থালীতে রান্নার গ্যাস এবং গাড়ি চালাতে ব্যবহৃত সিএনজির দাম বাড়ানো হয়নি। সার উৎপাদন ও চা শিল্পও এ যাত্রা রেহাই পেয়েছে। বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে, বৃহৎ শিল্প খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে প্রায় তিন গুণ বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে।
মাঝারি শিল্প খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।
শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (ক্যাপটিভ) জন্য ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা।
হোটেল ও রেস্তোরাঁর মত বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম আগে ছিল ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা। এখন তা বেড়ে হল ৩০ টাকা ৫০ পয়সা। সার কারখানায় প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম আগের মতই ১৬ টাকা এবং চা শিল্পে ১১ টাকা ৯৩ পয়সা থাকছে।
এছাড়া রান্নার গ্যাসের জন্য আগের মতই দুই চুলায় (ডাবল বার্নার) মাসিক ১০৮০ টাকা এবং এক চুলায় ৯৯০ টাকা বিল দিতে হবে গ্রাহকদের। সিএনজি স্টেশনেও গ্যাসের দাম আগের মত প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা থাকছে।
গণশুনানির প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গতবছর ৪ জুন সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি।
সে সময় প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের পাইকারি দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করা হয়েছিল। সেই মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে খুচরা পর্যায়ে যানবাহনে ব্যবহারের সিএনজি বাদে সব পর্যায়েই গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়।
গত মাসে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধন করে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংশোধনের ক্ষমতা নিয়ে নেয় মন্ত্রণালয়। এরপর বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল মন্ত্রণালয়। এর ছয় দিনের মাথায় দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপনে এল গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত।
মহামারীর অচলাবস্থা ভেঙে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আবার সচল হতে শুরু করায় খোলা বাজারের এলএনজির চাহিদাও বাড়তে থাকে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি ইউনিট এলএনজি ৭ ডলারে বিক্রি হলেও তা বাড়তে বাড়তে ৪১ ডলারে পৌঁছে যায়।
একদিকে ডলার সংকট অন্য দিকে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় গতবছর জুনে খোলা বাজার থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেয় সরকার।
এর ফলে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস থেকেই দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহে টান পড়ে। চাহিদা ও যোগানের হিসাব মেলানো এবং শিল্প কারখানায় বাণিজ্যিক লাইনের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়।
ফলে একই সঙ্গে গ্যাস সংকট দেখা দেয়, ফিরে আসে বিদ্যুৎ সংকটও। বছর শেষে শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসায় লোড শেডিং কমলেও গ্যাস সংকট রয়ে গেছে।
পেট্রোবাংলার হিসাবে, ২০২২ সালের শুরুতে দেশি কূপ ও এলএনজি থেকে ২৮৩৭ এমএমসিএফডি গ্যাস মিলছিল। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল বা এফএসআরইউ থেকে আসছিল ৫৪১ এমএমসিএফডি গ্যাস।
আর এক বছরের মাথায় ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর মোট সরবরাহ ছিল ২৫৮৮ এমএমসিএফডি। এর মধ্যে এলএনজি মাত্র ৩৮০ এমএমসিএফডি। বছরের মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি ছিল আরও খারাপ।
গ্যাস সংকটের কারণে জুলাই থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুরের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাসহ কাঁচামাল ও জ্বালানি হিসেবে গ্যাস লাগে এমন সব কারখানায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই।
এর সমাধানের আশায় গত কয়েক মাসে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে তারা বলেন, দাম বাড়িয়ে দিয়ে হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ যেন নিশ্চিত করা হয়, না হলে রপ্তানিতে হোঁচট খেতে হবে, অর্থনীতির জন্য তার ফল হবে ভয়াবহ।
রান্না বা পরিবহনের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো না হলেও শিল্প খাতে যে মাত্রায় দাম বেড়েছে, তাতে শিল্পোৎপাদনের খরচ বাড়বে, তাতে অবধারিতভাবে বাড়বে অনেক ভোক্তা পণ্যের দাম।
আবার সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম বেড়ে প্রায় তিনগুণ হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেই দেশের অর্ধেক বিদ্যুৎ আসে। ফলে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চাপ তৈরি হবে।