সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বলেছেন, গুমের মতো ভয়াবহ ঘটনায় যেসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জড়িত ছিলেন, তারা এখনও বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। এটি তার মতো ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর হৃদয়ে প্রতিনিয়ত রক্তক্ষরণ ঘটায়।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণশক্তি সভা আয়োজিত জুলাই সনদ ও নির্বাচন শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাসিনুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। এটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, এটা খুবই ভালো বিষয়। আমরা চাই সব বিভ্রান্তির নিরসন হোক। আমি মনে করি, মোট শহীদের সংখ্যার মতো ধর্ষণের শিকার মা-বোনদের সংখ্যা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। একজন নারী ধর্ষিত হলেও সেই নির্যাতন পাকিস্তানিদের ঘৃণা করার জন্য যথেষ্ট। ১৯৭১ সালে যে অপকর্ম করেছেন, সেটি আমরা বিশ্বাস করি। তবে কতটুকু করেছেন, এই সংখ্যা নিয়ে আমার আপত্তি আছে।
তিনি বলেন, দুই লাখ ধর্ষিত নারী আমরা পাইনি। আমি নিজে গিয়েছিলাম চৌগাছায়। যুদ্ধে ওখানে পাকিস্তানি সম্বন্ধে বলা হয়েছে ১০ জন নারী ধর্ষিতা হওয়ার কথা, কিন্তু আমি গিয়ে একজনকেও পাইনি। আমি নিজে সশরীরে গিয়েছিলাম মেজর হিসেবে টাকা দেওয়ার জন্য। আমি একজনও পাইনি। কেউ স্বীকারও করেনি। আমরা মিথ্যাচারের স্বাধীনতার গল্প শুনতে চাই না।
হাসিনুর রহমান প্রশ্ন তোলেন, ওই সময় তো আমাদের থানায় ওসিরা বাঙালি ছিল। আপনারা মামলা করেন নাই কেন? কয়টা মামলা হয়েছে? আমি জানতে চাই। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আপনি ১০০ লোকও পাবেন কি না? এত কিছু বানাইয়া-ফুলাইয়া-ফপাইয়া আমরা এই স্বাধীনতাকে বিকৃত করছি।
তিনি বলেন, আমরা যদি সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা চাইতাম, তাহলে ডিসেম্বর মাসেই স্বাধীন হতে পারতাম, কোনোরকম রক্তক্ষরণ ছাড়া। তা আমরা করিনি, কারণ শেখ মুজিবুর রহমান চাননি আমরা স্বাধীন হই। উনি চেয়েছিলেন পশ্চিম পাকিস্তান অর্থাৎ সমগ্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে। এই জিনিসটা বুঝতে কেন আমাদের সমস্যা, আমি বুঝি না। উনার এই সিদ্ধান্তহীনতা আর অদূরদর্শিতার জন্যই আমরা ২৬ মার্চ রাতে অসংখ্য লোক মারা যায়। তারপর যাই হোক আমরা স্বাধীন হয়েছি।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, চব্বিশে আমাদের ছাত্ররা আমাদের শিখাইছে ভারতের আধিপত্যমুক্ত বাংলাদেশ। এই ধারণাটাই আমাদের চলমান সরকার ধারণ করতে পারেনি। এটাই আমরা মানতে চাই না। আমরা সীমান্ত নিয়ে কথা বলতে পারি না। কেন? সমস্যা কোথায়? আমরা নিজের পয়সায় খাই, ভারতের দয়ায় চলি না। এটা যদি বলতে না পারি, আমাদের যারা আছেন তারা কেন বলতে পারেন না? এখনো আমাদের জেনারেলরা কথা বলতে ভয় পায়। আমরা ভুলে যাই আমরা এক জাতির এক দেশ কতটা শক্তিশালী।
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমাদের সরকার এখন ব্যস্ত হয়ে গেছে বেতন বাড়ানোর জন্য। আরে ভাই, বেতন বাড়ানো বন্ধ রাখেন পাঁচ বছর। অস্ত্র কেনেন, সমরাস্ত্র কেনেন। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব না থাকলে বেতন দিয়ে আমরা কি করবো? আমরা কেন এখনও অস্ত্র কিনতে ভয় পাই? অস্ত্র কিনতে চাইলে ভারত কেন আপত্তি দেয়? আরে ভাই, ভারতের আপত্তি কেন আপনি আমলে নেবেন? আমেরিকার আপত্তি কেন আমলে নেবেন? আমরা তো স্বাধীন।
তিনি আরও বলেন, ওই সিরাজ সিকদারের গুম থেকে শুরু করে জহির রায়হানের গুমের পেছনে কারা জড়িত? স্বাধীনতার পরও ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে কারা হত্যা করেছে? গত ১৬ বছরে গুম-খুনে জড়িত সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এখনও চাকরিরত অবস্থায় আছে।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে হাসিনুর রহমান বলেন, আমি নিজে দীর্ঘ সময় গুম ছিলাম। আমার গুমের পেছনে যারা জড়িত, তারা যদি এখনও বুক চিতিয়ে চলাফেরা করে, তাহলে আমার মতো গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু আমরা এখনও কিছু করতে পারছি না।
তিনি বলেন, অথচ আমরা কোথায়, কীভাবে স্বাধীন হবো, আমাদের সেই পথ ছাত্ররা দেখিয়েছে এই বিপ্লবের মাধ্যমে।