সুপ্রভাত ডেস্ক »
বিগত সরকারের সময় গুমের শিকার অনেক বাংলাদেশিকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন গুম তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
তিনি জানান, গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ হত্যা হয়েছেন, কেউ বিচারের আগেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, আবার কেউ সরাসরি ভারতে পাঠিয়ে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ ভাগ্যবশত ফিরে এলেও অধিকাংশই আজও নিখোঁজ।
বিচারপতি মইনুল বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে গুম ছিল রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করার একটি পরিকল্পিত কৌশল। এটি একটি সংগঠিত, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।
গুম সংক্রান্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৮৫০টি অভিযোগ বিশ্লেষণ করে ২৫৩ জন ভুক্তভোগীর তথ্য চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের গুম হওয়া, গুমকালীন পরিস্থিতি এবং ফেরত আসার পরের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে এক অভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে।
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর গুমের ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে কথিত ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত একটি গোপন বন্দিশালার পরিদর্শন করা হয়। এরপর সারাদেশে মোট ১৬টি গোপন আটককেন্দ্র খুঁজে পাওয়া গেছে। এসব কেন্দ্রে অনেককে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়েছে বলেও ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে।
কমিশন জানায়, ৮১% অভিযোগ জীবিত ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে, আর ১৯% এসেছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার থেকে। কিছু ভুক্তভোগী গোপন আটককেন্দ্র থেকে ফিরে এসে একে অপরের সঙ্গে দেখা হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন, যা ঘটনাগুলোর সাদৃশ্যতা নিশ্চিত করে।
তদন্তে সহায়তার জন্য তিন দফায় ১৩১টি গুমের অভিযোগ পুলিশের আইজিপির কাছে পাঠানো হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু উদ্ধার অভিযানের তথ্যও দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গুমের শিকার ব্যক্তিদের অনেককে পরে ‘জঙ্গি’ তকমা দিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বিচারপতি মইনুল বলেন, “জঙ্গিবাদের ছায়ায় রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন, আন্তর্জাতিক সহানুভূতি অর্জন এবং ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কৌশল হিসেবে গুমকে ব্যবহার করা হয়েছে।”
কমিশন সুনির্দিষ্টভাবে দুটি সুপারিশ করেছে, ১. সন্ত্রাসবিরোধী মামলার অপব্যবহার রোধ এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে ন্যায়ের ভিত্তিতে দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
২. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউন্টার টেরোরিজম পদ্ধতিতে সংস্কার এনে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার আদলে একটি কার্যকর কৌশল প্রণয়ন।
বিচারপতি মইনুল বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে রাষ্ট্রকে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে হবে। অন্যথায়, সেটি জনগণের আস্থা ও রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করে দেয়।


















































