নিজস্ব প্রতিবেদক :
নগরে ছেলের সঙ্গে বউয়ের বিরোধ মিটিয়ে এবং গুপ্তধন পাইয়ে দেয়ার নামে এক নারীর কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে হাফেজ মোহাম্মদ লিয়াকত আলী কথিত এক কবিরাজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কবিরাজ হাফেজ মোহাম্মদ লিয়াকত আলী বাঁশখালী উপজেলার সরল ইউনিয়নের পাইরং এলাকার মো. জাকির আহম্মদের ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তার প্রতারণার শিকার রোকেয়া করিম (৬০) নামে এক নারীর মামলা দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকালে পাঁচলাইশ থানাধীন রহমান নগর আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ভুক্তভোগী ওই নারীও একই আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর রোডের বাসিন্দা।
ওসি আবুল কাশেম ভুইয়া জানান, বেশ কিছু দিন ধরে রোকেয়ার ছেলের সাথে তার স্ত্রীর বিরোধ চলে আসছিল। রোকেয়া লোকমুখে শুনেছেন ‘কুরআনি’ চিকিৎসার মাধ্যমে পারিবারিক বিরোধ মেটাতে পারেন প্রতিবেশি হাফেজ মো. লিয়াকত আলী। তাই রোকেয়া দ্বারস্থ হন তার।
ছেলের সংসার জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম বলে দাবি করে কথিত কবিরাজ লিয়াকত আলী সাড়ে ৩ লাখ টাকা কাছে দাবি করেন। এ বিষয়ে উভয়ই চুক্তিবদ্ধ হন। কবিরাজের কথায় বিশ্বাস করে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পরিশোধও করেন রোকেয়া। আমল করতে রোকেয়াকে বিভিন্ন সুরা-কেরাতও শিখিয়ে দেন কবিরাজ। ছেলের সংসার বাঁচাতে নিয়মিত আমল করতে থাকেন রোকেয়া।
কবিরাজের বাসায় নিয়মিত যাতায়াতের একপর্যায়ে কবিরাজ রোকেয়াকে জানান, প্রতিবেশী বাসিন্দা তার (রোকেয়া) দেবরের জমির মাটির নিচে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার গুপ্তধন আছে। রোকেয়াও লোভে পড়েন। ওই গুপ্তধন পাইয়ে দিতে রোকেয়ার কাছ থেকে তিনটি খালি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও নেন কবিরাজ হাফেজ লিয়াকত আলী। এরপর বিভিন্ন দফায় গুপ্তধন পাইয়ে দেয়ার নামে রোকেয়ার কাছ থেকে ৬৫ লাখ টাকা নেন কবিরাজ।পরে আরও এক লাখ টাকা দাবি করেন কবিরাজ। এতে অপারগতা জানালে ছেলের ক্ষতি হবে বলে রোকেয়াকে হুমকি দেন কবিরাজ। বিষয়টি থানায় অবহিত করলে কবিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পাশাপাশি খালি স্ট্যাম্পগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
ওসি আবুল কাশেম ভুইয়া জানান, হাফেজ মোহাম্মদ লিয়াকত আলী একজন প্রতারক। নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে এবং ছেলের সংসার বাঁচানোর নামে রোকেয়ার কাছ থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথাও স্বীকার করেন কথিত কবিরাজ লিয়াকত।
কথিত কবিরাজ হাফেজ মোহাম্মদ লিয়াকত আলী অন্ধ সাজলেও বাস্তবে তিনি অন্ধ নন বলে জানিয়েছেন ওসি আবুল কাশেম। জিজ্ঞাসাবাদে রোকেয়ার কাছ থেকে ৬৫ লাখ টাকা নিয়ে সে বিভিন্ন জায়গায় দান করেছে বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন। রোকেয়ার কাছ থেকে টাকা পাওয়ার পর প্রথম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অন্য এক নারীকে বিয়ে করেন কবিরাজ। নতুন স্ত্রীকে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন। টাকা পাওয়ার পর নতুন স্ত্রী তাকে তালাকও দিয়েছেন বলে জানান কবিরাজ।
এ মুহূর্তের সংবাদ