নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতকানিয়া <<
সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবদুল হক মিঞা (৮৫) হত্যার দুই দিনের মাথায় বিভিন্ন ক্লুসহ হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে সাতকানিয়া থানা পুলিশ।
গালিগালাজ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে গৃহকর্মী জমির উদ্দিন (২৮) ঘুমন্ত অবস্থায় আবদুল হক মিয়াকে খুন করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে আটক জমির উদ্দিন হত্যার কারণ, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও হত্যার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দেয়।
গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু তার দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। তিনি বলেন, আটক গৃহকর্মী জমিরের স্বীকারোক্তি মতে বেতন বৃদ্ধি করতে বলায় চেয়ারম্যান আবদুল হক মিঞা রাতে জমিরকে গালিগালাজ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় জমির। রাতভর জমির তাকে মারার পরিকল্পনা করতে থাকে। ভোরে আবদুল হক মিঞা ফজরের নামাজ শেষে পেছনের দরজা খোলা রেখে নিজ শয়ন কক্ষে ঘুমাতে যান। ঘুমন্ত অবস্থায় প্রথমে লোহার খন্তা দিয়ে মাথায় আঘাত করে। পরে ছুরি দিয়ে কপালে এবং চোখের উপর আঘাত করে। অতঃপর নাকে মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর হত্যাকারী জমিরের ব্যবহৃত মোবাইল সেট এবং নিহতের মোবাইল সেট সামনের পুকুরে ফেলে দেয়। যা মামলার আলামত হিসেবে পুলিশ গত সোমবার পানি সেচ করে পুকুর থেকে উদ্ধার করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, এসব কাজ শেষ করে জমির নিজের পা’ বেঁধে পাশের কক্ষে অসুস্থতার ভান করে বসে থাকে। হাত খোলা অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। জমির বুঝানোর চেষ্টা করেছে বহিরাগত খুনি তাকে বেঁধে রেখে চেয়ারম্যানকে হত্যা করেছে।
এদিকে আবদুল হক মিয়া খুনের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী হত্যাকাণ্ডের শুরুতেই কারণ হিসেবে নিহতের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদের দিকে সন্দেহের তীর নিক্ষেপ করে। তাদের ধারণা ছিল সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের দীর্ঘদিনের চলমান কলহ খুনের কারণ।
এদিকে গতকাল বুধবার নিহতের ছেলে নেজাম উদ্দিন বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সাতকানিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের পরবর্তী পুলিশ প্রশাসন এ সংবাদ সম্মেলন করে।
আবার অনেকে বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলেন, সাতকানিয়ায় আরো অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হলেও কোন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা’ জনসমক্ষে প্রকাশ করার বিষয় এই প্রথম। তাছাড়া বিগত ১৬ বছর হত্যাকারী নিহতের বাড়িতে কাজ করছে। হত্যাকারীকে নিহত আবদুল হক কি এই প্রথম গালি দিয়েছেন? যার কারণে জমির তাকে (আবদুল হক) হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়? নাকি অন্য কেউ তাকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করেছে? অথবা তাকে ভিকটিম হিসেবে রেখে প্রকৃত অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে কিনা? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর থেকেই যায়। তারা পুলিশ প্রশাসনের কাছে আরো ব্যাপক তদন্তের জন্য জোর দাবি জানান।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু বলেন, অতি দ্রুত সময়ে সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করছে পুলিশ।
গত সোমবার ভোরে গৃহকর্মী জমির উদ্দিনকে তার শয়নকক্ষে ঘুমন্তাবস্থায় হত্যা করা হয়। পরদিন শয়ন কক্ষ থেকে সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হকের লাশ উদ্ধার পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় এবং গৃহকর্মী জমির উদ্দিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।