চবি প্রতিনিধি »
‘তোরা ছিলি, তোরা আছিস, জানি তোরাই থাকবি’ গাইছিলেন মোজাম্মেল হাসান। বয়স প্রায় ৭০ এর কাছাকাছি। একসময় গানের সুরে মাতিয়েছিলেন চবির শাটল ও ঝুপড়ির অলিগলি। এখন বয়স হয়েছে। কমে গেছে শরীরের শক্তি। কিন্তু কমেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা, কমেনি বন্ধুদের প্রতি টান। তাইতো গতকালের হিসাববিজ্ঞানের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে ছুটে এসেছেন।
গানের তালে তালে স্মরণ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সুখকর স্মৃতি। মোজাম্মেল হোসেনের মতো কয়েক হাজার নবীন প্রবীণের মেলা বসেছিলো গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এসো মিলি ‘পঞ্চাশের উৎসবে, গৌরবে অস্তিত্বে অনুভবে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উদযাপন করা হয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী। বিভাগটির ১ম ব্যাচ থেকে শুরু করে শেষ ব্যাচ পর্যন্ত প্রায় ২১০০ শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি পরিবার ও শিক্ষকদের নিয়ে প্রায় ৪০০০ হাজার লোক একত্রিত হয় উৎসবকে ঘিরে।
সকাল থেকেই নানা বয়সের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। শহর থেকে ছেড়ে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটলেও দেখা যায় ভিন্ন রূপ। সচরাচর দেখা যায় একদল তরুণ আড্ডা দিচ্ছে বা গলা ছেড়ে সুর তুলছে। কিন্তু গতকাল ছিলো প্রবীণদের দিন। সুর অথবা বেসুরো গলায় শাটল মাতিয়েছেন তারা। হয়তো গানের কলির সাথে খুঁজে বেড়িয়েছেন পুরনো সেই সুমধুর দিনের স্মৃতি। অনেকেই নিয়ে এসেছেন নিজের সন্তানকে, আবার অনেকে এনেছেন নাতি-নাতনিদের। তাদেরও আনন্দ ও কৌতূহলের সীমা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে হাজারো জিজ্ঞাসা ; বাবা কোথায় ক্লাস করতেন? কোন হলে থাকতেন। উচ্ছ্বাসের সাথে সন্তানদের সেই কৌতূহল মিটিয়েছেন তারা। অনেকে সন্তানদের নিয়ে গিয়েছেন নিজের হলে। বর্ণনা করছিলেন এখানে বসেই কিভাবে পার করেছিলেন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।
পুরাতন বন্ধুকে পেয়ে অনেকেই হয়ে গেছেন আবেগাক্রান্ত। তখন তো আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিলোনা। তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে হারিয়ে ফেলেছিলেন প্রিয় বন্ধুকে। এতোদিন পর খুঁজে পেয়ে আনন্দের শেষ ছিল না, ছিল অভিযোগও। প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, মনে রেখেছিস তো বন্ধু আমাকে?
উৎসবে এসেছিলেন মাস্টার্স প্রথম ব্যাচের ছাত্র কাজি আহমদ নবী। বয়স ৭৪ পার হয়ে গিয়েছে। তিনি এসেছিলেন তার স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ও ২ নাতিকে সাথে নিয়ে। তার কণ্ঠে আনন্দের পাশাপাশি শোনা যায় আফসোসের কথা। কারণ তার অনেক প্রিয় বন্ধুকেই খুঁজে পান নি তিনি। অনেকেই মারা গিয়েছেন। তিনি বলছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের কথা। ৭১ সালে তিনি মাস্টার্সের ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর। কি যে উৎফুল্লতা ছিলো সবার চোখে মুখে। আর পরাধীনতার শিকল টানতে হবে না তাদের।
সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ সংলগ্ন শহীদ মিনার এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। সকাল ৯টা থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। এছাড়া স্মারক বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক ড. ভবতোষ ব্যানার্জি। তিনি একাউন্টিং রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ইন্ডিয়ার সভাপতি ও ইন্ডিয়ান একাউন্টিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। পরে স্টার এলামনাই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে ৯ ক্যাটাগরিতে সর্বমোট ১২৩ জন স্টার এলামনাইকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এতে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ একাউন্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক এম হারুনুর রশীদ। এছাড়া বিকেল ৪টা থেকে নগরীর জিইসি কনভেনশন হলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।