রাজিব শর্মা »
বাজারে অন্য নিত্যপণ্যের ন্যায় বেড়েছে মসলাসামগ্রীর দাম। রমজানের বাকি এক মাসেরও কম। চাহিদা অনুযায়ী গরম মসলার সরবরাহ অপ্রতুল। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাইকাররা বাড়তি দামে বিক্রি করছে সকল ধরনের মসলাজাত পণ্য। দেড় থেকে দু’মাসের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জের বাজারে সব ধরনের গরম মসলার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানের আগেই আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বেড়েছে। আমদানিনির্ভর এসব পণ্য বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে সামনে আরও দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমদানিকৃত যে জিরা কেজিপ্রতি ২৮০-৩৫০ টাকা বিক্রি হয়েছিল তা দেড় মাসের ব্যবধানে বেড়ে সাড়ে ৬শ থেকে ৭শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে সম্প্রতি আমদানি বাড়ায় দুয়েকদিন ধরে কিছুটা কমেছে, যদিও তা এখনও আগের অবস্থানে যায়নি। একইভাবে ভারতীয় মরিচ না আসায় দেশীয় (হাটহাজারীর) শুকনা মরিচ কেজিপ্রতি দাম রেকর্ড ৫৬০ টাকা ছুঁয়েছে। এছাড়া সরিষা, ধনিয়াসহ দেশে উৎপাদন হয় এমন মসলা যেমন মৌরির দাম অতীতের যেকোনো সময়ের রেকর্ড ভেঙে কেজিপ্রতি ২৯০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে পাইকারি দামে প্রতি কেজি ভারতীয় জিরা বিক্রি হচ্ছে ৫৭০ থেকে ৫৯০ টাকা, আফগানিস্তান কিংবা সিরিয়ার জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬৪০ থেকে ৬৮০ টাকা, দারুচিনি ৪৩০ থেকে ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪২০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, গোলমরিচ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, জয়ত্রী ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০, জায়ফল ৬০০, এলাচ (এলএমজি ব্র্যান্ড) ১ হাজার ২৭০, মৌরি ২৯০-৩০০, তেজপাতা ৭০-৮০, সরিষা ১১০-১১২, ধনিয়া ১১০, ভারতীয় হলুদ ১২৬ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি হলুদ ১২২-১৩০ টাকা, আমদানিকৃত মরিচ ৩৭০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসবি ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার শরীফুর রহমান বলেন, ‘রমজান মার্চ মাসে। সাধারণত রমজানের আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রধান পাইকারি বাজারগুলোতে মসলার চাহিদা বেড়ে যায়। যার কারণে রমজানকে সামনে রেখে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে। এবারো চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে, কিন্তু আগের তুলনায় সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের মসলাজাত পণ্যের আড়তদার অমৃত ভা-ারের ক্যাশিয়ার অজিত গুহ বলেন, ‘রমজানে মসলার বাজার একটু গরম থাকে। তবে এ বছর কিছু ব্যবসায়ী এলসি খুলেছেন। এসব পণ্য রমজান শুরুর আগে দেশে পৌঁছালে দাম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমরা চাই যেন রমজানের আগেই মসলার বাজার স্বাভাবিক হোক।
সাধারণত হলুদ, মরিচ, মৌরি, মেথি, কালোজিরা, তেজপাতা, আদা-রসুন পেঁয়াজ, সরিষা ও ধনিয়াসহ অধিকাংশ গরম মসলার বাজার আমদানিনির্ভর। যার কারণে আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে দেশের বাজারে পণ্যগুলোর দাম অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এসব মসলার কিছু অংশ দেশে উৎপাদিত হলেও তা চাহিদা অনুযায়ী অপর্যাপ্ত। ফলে দেশের মসলা বাজারের ৭০-৮০ শতাংশই বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের বিএসপি ভবনের এন আর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ফয়সাল বলেন, প্রতিবছর শীতকালে সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যায়। ফলে মসলার বাজার একটু চড়া থাকে। তাছাড়া রমজান আসলে চাহিদা বাড়ে। ফলে কয়েক মাস ধরেই মসলার দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। আমদানি স্বাভাবিক হয়ে গেলে দাম সহনীয় হবে।
চাকতাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বাড়লে দেশীয় বাজারেও বেড়ে যায়। আমাদের সবচেয়ে বেশি গরম মসলা আমদানি হয় চীন, ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, মাদাগাসকার, গুয়েতেমালাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। দীর্ঘদিন ডলার সংকটের কারণে মসলা আমদানিকারকরা পণ্য বুকিং দিতে পারেননি। এ কারণে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়েছে। তাছাড়া সরবরাহ সংকটের পাশাপাশি ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়াও মসলার বাজারে অস্থিতিশীলতার দিকে ঝুঁকছে। তবে ব্যাংক এখন কিছু এলসি খুলছে, যদি এলসিকৃত মসলাজাত পণ্য খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করে তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। তাছাড়া দেশীয় রবি মৌসুমের পণ্য বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করলেও বাজার স্থিতিশীল হতে পারে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, বাজার সরবরাহ সংকটের কারণে সকল ধরনের মসলাজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এ পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণত আমাদেরও বেশি দামে আমদানি করতে হয়। এখনো আমদানিকৃত রসুন ও আদা বাজারে আসেনি। ফলে দেশীয় ও ভারতীয় আদা-রসুন বাজারে থাকলেও আকারে ছোট হওয়াতেই ক্রেতাদের আগ্রহ কম। আশা করছি রমজানের আগে মসলার বাজার স¦াভাবিক হবে।’