গবেষণা: ৭৪ শতাংশের বেশি এসএমই উদ্যোক্তা সরকারের আইন মেনে ব্যবসা করতে চায়

এসএমই ফাউন্ডেশন এবং এফইএস বাংলাদেশের সেমিনারে আলোচকবৃন্দ

সুপ্রভাত ডেস্ক  »

এসএমই ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের ৭৪ শতাংশেরও বেশি এসএমই উদ্যোক্তা সরকারের আইন ও প্রবিধান মেনে ব্যবসা করতে চায়। তবে এক্ষেত্রে সরকারের নিয়ম—কানুন সহজ করা বা ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা, জামানতবিহীন ঋণ বাড়ানো এবং আইন মেনে ব্যবসা করার সুযোগ—সুবিধা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।

রোববার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও পর্যটন ভবনে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং জার্মান উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেডরিক—এবার্ট—স্টিফটুং (এফইএস) বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক এসএমই: আনুষ্ঠানিককরণের চ্যালেঞ্জ এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে গবেষণার এসব তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেলিতা মেহজাবিন। খবর বাসস।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। এফইএস বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ড. ফেলিক্স গারদেস এবং বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রোগ্রাম প্রধান গুঞ্জন ডাল্লাকটি সেশনে বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার। সমীক্ষা অনুসারে, আইন মেনে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কর কাঠামোকে প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৫৭ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তা। আর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন পদ্ধতিকে বাধা মনে করেন ৫৪ শতাংশ উদ্যোক্তা। প্রায় ৫১ শতাংশ উদ্যোক্তা ট্রেড লাইসেন্সের অতিরিক্ত ব্যয়কে একটি বাধা হিসাবে দেখেন এবং ৪৪ শতাংশ বলেছেন সরকারী আইন ও বিধিগুলোর জটিলতাও অন্যতম বাধা।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহীর ৩০৪ জন উদ্যোক্তার ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। উদ্যোক্তারা জানান, আইন মেনে ব্যবসা করতে ভারতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মাত্র ৭টি সনদের দরকার হলেও বাংলাদেশে অন্তত ৩৪ টি দপ্তর থেকে সনদের দরকার হয় বলে জানান উদ্যোক্তারা।

২০১৩ সালের পরিসংখ্যান ব্যুরো’র অর্থনৈতিক জরিপ অনুসারে দেশের ৭৮ লাখের বেশি সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই অনানুষ্ঠানিক বা সরকারের আইন—কানুন ও কর কাঠামোর বাইরে। এ অবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠানকে আইন—কানুন ও কর কাঠামোর আওতায় আনতে একটি সামগ্রিক কৌশলপত্র তৈরি, ধাপে ধাপে আনুষ্ঠানিকীকরণ, নিয়ম—কানুন সহজীকরণ এবং উদ্যোক্তাদের আর্থিক ও অ—আর্থিক প্রণোদনা দিতে সরকারের প্রতি সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সেমিনারে এসএমই উদ্যোক্তা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর, এসএমই চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, গবেষক, অর্থনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজন অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সুরক্ষার মাধ্যমে এসএমই খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন সরকারের জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২, এসএমই নীতিমালা ২০১৯, জাতিসংঘের এসডিজি ২০৩০ এবং সরকারের নির্দেশনা অনুসারে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা এসএমই ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগী দেশের প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা।