সুপ্রভাত ডেস্ক »
গবেষণা বলছে, সাউদার্ন রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমি যদি শিকার, জাহাজের ধাক্কা বা জালে আটকে পড়ার শিকার না হতো, তবে এখনো তাদের অনেকেই জীবিত থাকত এবং সাগরে সাঁতার কেটে বেড়াত।
‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণায় বলা হয়েছে, এ প্রজাতির তিমির গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছর। অন্তত ১০ শতাংশ তিমি ১৩১ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারত—যদি তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন অব্যাহত থাকত।
তিমির মধ্যে সাউদার্ন রাইট হোয়েল প্রজাতি পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘায়ু স্তন্যপায়ী প্রাণী। প্রথম স্থানে রয়েছে বোহেড তিমি, যেগুলো ২০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
বোহেড তিমির বয়স নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত পরীক্ষাগারে এক বিশেষ পদ্ধতির পাশাপাশি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যও পাওয়া গেছে। ২০০৭ সালে এক আদিবাসী শিকারির হাতে ধরা পড়া তিমির শরীরে একটি পুরোনো হরপুনের অংশ পাওয়া গিয়েছিল, যা ১৮৮৫ সালে তৈরি হয়েছিল।
গবেষকরা সাউদার্ন রাইট হোয়েল এবং উত্তর আটলান্টিক সাউদার্ন রাইট হোয়েলের বয়স নির্ধারণের জন্য নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। তিমির শরীরে থাকা বিশেষ চিহ্ন, যাকে ক্যালোসিটি বলা হয়, তা তাদের বয়স জানাতে সাহায্য করে। এই চিহ্নগুলো তিমির নাকে থাকে এবং বিভিন্ন সময়ের ছবি থেকে তাদের পরিচিতি দেওয়া যায়।
প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে সাউদার্ন রাইট হোয়েল আসে এবং সেখানে তাদের সন্তান জন্ম দেয়। অস্ট্রেলিয়ায় বাণিজ্যিক তিমি শিকার ১৯৭৯ সালে বন্ধ হয় এবং ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক তিমি শিকার কমিশন তা নিষিদ্ধ করে। এরপরের কয়েক দশকে সাউদার্ন রাইট হোয়েলের কিছু অংশ ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হয়েছে।
গবেষণার সহলেখক এবং গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. পিটার করকারন জানিয়েছেন, তিমিরা যদি তাদের স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারত, তবে বর্তমানে জীবিত কিছু তিমি অস্ট্রেলিয়ার উপনিবেশ যুগের সময়ও জীবিত থাকতে পারত।
জিওগ্রাফ মেরিন রিসার্চের চেয়ার এবং সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. ক্যাপ্রি জোলিফ বলেন, তিমিদের দীর্ঘজীবন এবং স্মৃতিশক্তি রয়েছে।
‘তিমি শিকার খুব বেশি দিন আগে বন্ধ হয়নি। এখনও এমন তিমি রয়েছে, যারা শিকারের সময় জীবিত ছিল। ফলে তাদের হয়তো মানুষ দ্বারা শিকার হওয়ার স্মৃতি রয়ে গেছে,’ বলেন তিনি।
জোলিফ জানান, রাইট হোয়েল নামটি এসেছে তাদের সহজ শিকার হওয়ার কারণে। তারা ছিল ‘আদর্শ তিমি শিকার’, কারণ এরা বেশ ভারী এবং পানির উপরে দীর্ঘসময় ধরে থাকত।
ফলে তাদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। উত্তর আটলান্টিক, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং সাউদার্ন রাইট হোয়েল এই তিন প্রজাতি বিশ্বজুড়ে বিপন্ন। এদের জন্য মাছ ধরার জালে আটকে যাওয়া, জাহাজের ধাক্কা, শব্দদূষণ, পানিদূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন এখনো বড় হুমকি।
জোলিফ বলেন, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়ায় খুবই সৌভাগ্যবান। প্রতিবছর সাউদার্ন রাইট হোয়েল আমাদের উপকূলে আসে।’
এসব তিমি খাদ্যের সন্ধানে অ্যান্টার্কটিকার জলসীমায় ঘোরাফেরা করে এবং উত্তরের উষ্ণ, সুরক্ষিত পানিতে সন্তান প্রসব করতে আসে। এখানে বাচ্চারা একসঙ্গে খেলাধুলা করে, আর মা তিমিরা বিশ্রাম নেয়।
তিমি বিজ্ঞানী ড. ভেনেসা পিরোত্তা বলেন, ‘তিমি আমাদের মতোই দীর্ঘজীবী প্রাণী। ভালো খবর হলো, বিশ্বের অধিকাংশ জায়গায় তিমি শিকার বন্ধ হয়েছে’।
‘তবে নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েলের মতো কিছু প্রজাতি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। তাই তাদের জীববিজ্ঞান এবং আয়ুষ্কাল নিয়ে গবেষণা এখন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ’, যোগ করেন তিনি।
নর্থ আটলান্টিক সাউদার্ন রাইট হোয়েলের অবস্থা সংকটাপন্ন, কারণ তাদের গড় আয়ু মাত্র ২২ বছর—যা মানুষের শিকার, জাহাজের আঘাত এবং জালে আটকে যাওয়ার কারণে কমে যাচ্ছে। এ প্রজাতির তিমি প্রাথমিকভাবে আটলান্টিক মহাসাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান