গতানুগতিক বাজেট নিয়ে উল্লসিত নন অর্থনীতিবিদেরা

সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের চেয়ে সাত হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি
এমন একটি সময়ে বাজেট ঘোষণা করলেন, যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব ঘাটতি, বিদেশি ঋণের কঠোর শর্ত, বিনিয়োগে স্থবিরতাসহ বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। অথচ সরকার পরিবর্তনের পরে প্রথম ঘোষিত বাজেটে এসব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে নতুন কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটি ঘিরে এক ধরনের বাড়তি আগ্রহ ছিল অর্থনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে । অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, আগের রাজনৈতিক সরকারগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে খুব একটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ।
‘মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে। ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাময়িক হিসাবে তিন দশমিক ৯৭ শতাংশ হয়েছে, যা চূড়ান্ত হিসাবে কিছুটা বাড়তে পারে। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি বৃদ্ধি পাবে এবং মধ্যমেয়াদে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশা করছি,’ বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
নতুন বাজেটকে ব্যতিক্রমধর্মী অভিহিত করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের এবারের বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত আমরা বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করছি। প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে আমরা চেষ্টা করেছি সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে।’
চলতি বছরের উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার সামনের বছর কমিয়ে সাড়ে ছয় শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে নতুন বিনিয়োগসহ অর্থনীতিতে যে ধরনের পরিবর্তন দরকার, সেটি আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বিবিসিকে বলেন, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যে বাধাগুলো রয়েছে, সেগুলো কতটুকু দূর করা গেছে? বরং দেখা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে দেশে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের সবচেয়ে স্থবির অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, সেটি বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলেই মনে হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিপরীতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও সামাজিক বৈষম্য দূর করা এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জের জায়গা বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা না গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন কারণে নতুন বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
যেহেতু বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই সেহেতু অনেকে ভেবেছিলেন এবার বাজেটের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হওয়ার ঝোঁক নয় জনবান্ধব বাজেট প্রণয়নের জোঁক থাকবে। বাস্তবে তেমন হয়নি বলে আমরাও হতাশ হয়েছি।