বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দেশের মানুষ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই আমাদের ১০ দফা দাবি পূরণ করতে হবে। সরকার আপসে তা মেনে নেবে না। তাই ফয়সালা হবে রাজপথে। এ বীর চট্টলার মানুষ ফয়সালা রাজপথে করার জন্য প্রস্তুত। সরকারকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনে বাধ্য করতে হবে। এই বাধ্য করার আন্দোলনের সূচনা হচ্ছে গণমিছিল। দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
তিনি গতকাল শনিবার বিকেলে বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ সংলগ্ন ওয়াসা মোড়ে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির গণমিছিলের পূর্ববর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এর আগে দুপুর একটা থেকে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে যোগ দেন। গনমিছিলটি ওয়াসা মোড় থেকে শুরু হয়ে আলমাস, কাজীর দেউড়ি, নুর আহমেদ সড়ক, লাভলেন, জুবলি রোড় হয়ে তিন পুলের মাথায় গিয়ে শেষ হয়।
ড. মোশাররফ আরও বলেন, এ সরকার জনগণের সরকার নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তাই এই সরকারের দেশের জনগণের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই। সেজন্য আজকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে বিচার ব্যবস্থা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। বিভাগীয় সমাবেশ থেকে জনগণ আমাদেরকে রায় দিয়েছে। যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে তারা এদেশে গণতন্ত্র আসতে দেবে না। অর্থনীতি মেরামত করতে পারবে না, তারা বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে পারবে না। তাই আমরা এদেশের মানুষের ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। এই দাবি উত্থাপন করার পর যারা সরকারকে পছন্দ করে না, গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক দল-গোষ্ঠী, এই ১০ দফা সমর্থন করেছে। যুগপৎ আন্দোলনের জন্য তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আমরা এই যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য প্রথম কর্মসূচি পালন করছি গণমিছিল।
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল এবং নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের মাধ্যমে এই দেশে নির্বাচন, খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতাদের মুক্তির দাবিতে আমরা ১০ দফা প্রদান করেছি। এই ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য সারাদেশে প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, কিছুদিনের মধ্যে একটা হুইসেল দেয়া হবে। সেই হুইসেল মানে সরকার পতনের হুইসেল। তখন লাখ লাখ জনতা রাজপথ দখলে নেবে।
তিনি আরো বলেন, ওবায়দুল কাদের বলে নির্বাচন নাকি করতে দেবে না। আমরা নির্বাচন করবো, সেই নির্বাচনে জয়ী হবো- সেই ভয়ে আজকে সরকারের হৃদকম্পন শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বিএনপির। আগামী হুইসেলের জন্য অপেক্ষা করুন, দেখবেন সকালে উঠে তারা পালিয়ে গেছে। আবার জনতা ক্ষমতায় আসবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, সারাদেশে ১০টি গণসমাবেশ নানা বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণ সফল করেছিলো। আজকের এই গণমিছিলের একটি স্লোগান ওঠেছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে সরকারে আছে। এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ছিনতাই করেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আওয়ামী লীগ এখন প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু এসব করে আওয়ামী লীগের শেষ রক্ষা হবে না। গায়েবি মামলা দিয়ে পতন ঠেকানো যাবে না।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আজকের গণমিছিল প্রমাণ করেছে জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমরা মানুষের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।
মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ তুলে ধরেছে বিএনপি। এই রূপরেখায় হবে মানুষের মুক্তির সনদ।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন ও সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া। বিজ্ঞপ্তি