নিজস্ব প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড
সীতাকু-ে ডাকাতি করে ফেরার পথে স্থানীয়রা ধাওয়া করে তিনজনকে আটক করে। আটক ডাকাতদের গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলে একজন (অজ্ঞাতনামা) নিহত হয়।
এদিকে, সীতাকু- সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেছেন, আটক দুইজন ডাকাত নয়, পথচারী হতে পারে।
গতকাল সোমবার ভোর ৪টায় বাড়বকু- ইউনিয়নের মান্দারীটোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আটক শফিউল আলম (৪৪) মুরাদপুর ইউনিয়নের গুপ্তাখালী গ্রামের ও নাজিম উদ্দিন (৩৬) একই ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা যায়।
জানা যায়, মুরাদপুর ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের দুই বাড়িতে ডাকাতি করে ফিরছিল ১০/১২ জনের এক ডাকাত দল। তারা বাড়বাকু-ের মান্দারিটোলা গ্রামের রাস্তা দিয়ে ফেরার সময় ডাকাত প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের সম্মুখে পড়ে এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা মসজিদের মাইকে ডাকাত প্রতিরোধের ঘোষণা দিলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ৩ জনকে আটক করে পিটুনি দেয়া হয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা একজনকে পিটুনি দিয়ে তার কান কেটে দেয়। এতে সে নিহত হয়।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ ও অপর দুইজনকে থানায় নিয়ে যায়। নিহতের লাশ সীতাকু- স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, ওই ব্যক্তির কান কেটে দেওয়ায় রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি চট্টগ্রামের মর্গে পাঠানো হয়।
ডাকাতির ঘটনা ঘটা অধ্যাপক টুটুল ও নুরনবীর বাড়ি পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত এসপি আশরাফুল করিম ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল্লা আল বাকের ভুঁইয়া।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার জামাল উল্লাহ জানান, পার্শ্ববর্তী মুরাদপুর ইউনিয়নের দুই বাড়িতে ডাকাতি করে ফিরে যাচ্ছিল ১৫/১৬ জনের একটি ডাকাত দল। এ সময় ডাকাতি প্রতিরোধে গঠিত এলাকাভিত্তিক প্রতিরোধ কমিটির দুই যুবককে একা পেয়ে তাদের মোবাইল ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। এরপর ঐ দুই যুবক স্থানীয় মসজিদের মাইকে ডাকাত ডাকাত ঘোষণা করলে কমিটির লোকজন ও স্থানীয় জনতা ডাকাতদের ধাওয়া দেয়। এ সময় ডাকাতরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে গেলেও স্থানীয় জনতা তিনজনকে ধরে পিটুনি দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলে একজন নিহত হয়।
কিছুদিন যাবৎ সীতাকু-ে চুরি ও ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় যুবকদের নিয়ে ডাকাতি প্রতিরোধে এলাকাভিত্তিক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে পুলিশ। জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় যুবকদের নিয়ে গঠিত এসব টিম পালাক্রমে প্রতি এলাকায় পাহারায় নিয়োজিত আছে।
সীতাকু- সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম জানান, জনগণের হাতে আটক সফিউল আলম ও নাজিম উদ্দিন দুজনের বিষয়ে খবরাখবর নিয়ে জানা যায় তারা ডাকাত নয় পথচারী ছিল, বিষয়টি আমরা আরও তদন্ত করে দেখছি।
উল্লেখ্য, গত এক মাসে সীতাকু- উপজেলার কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বাকু- ও মুরাদপুর ইউনিয়নে ১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু মুরাদপুরে ৪টি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ১৩টি ডাকাতির ঘটনায় শুধু ৩টির জন্য থানায় মামলা হয়েছে, মামলার সুত্র ধরে পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
মুরাদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী বাবু বলেন, গত একমাসে আমার ইউপিতে পর পর ৪টি ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। বিষয়টি আমি পুলিশ সুপারকেও জানিয়েছি, একের পর এক ডাকাতিতে এলাকার মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
সীতাকু- মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সুমন বণিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশের সহায়তায় প্রায় প্রতি এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত এক মাসে ৩টি ডাকাতির মামলা হয়েছে, আমরা ১০ জন ডাকাতকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছি।
এ মুহূর্তের সংবাদ