করোনা মহামারিতে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি মাথায় রেখে গণপরিবহন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। শর্ত ছিল, গাড়িতে জীবাণুনাশক রাখতে হবে, যাত্রী-চালক-হেলপার সবাই মাস্ক পরবে, দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা যাবে না, পাশের একটি আসন খালি রেখে যাত্রীরা বসবে। ভাড়া গুনতে হবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৬০% বেশি। কিন্তু এর কোনোটি যথাযথভাবে মানেননি চালক-হেলপাররা। বাড়তি ৬০% থেকেও বেশি ভাড়া আদায়ের দিকেই তাদের ঝোঁক ছিল। এ অবস্থায় ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। ফলে এক পর্যায়ে সরকার ২৯ আগস্ট বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে নেয়। ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর করা হয়। সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র পুরোটাই ভিন্ন।
নগরীর আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, চকবাজার, নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, বাস, টেম্পো, হিউম্যান হলার কোনো পরিবহনেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। পূর্বনির্ধারিত নিয়মে ভাড়া আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হলেও করোনাকালীন বর্ধিত ভাড়া গতকালও অব্যাহত ছিল। বাসে বহদ্দারহাট থেকে নতুন ব্রিজ (শাহ আমানত ব্রিজ) পর্যন্ত বাসভাড়া ছিল জনপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা। মাহিন্দ্রায় জনপ্রতি ভাড়া ছিল ৮ টাকা। এখনো জনপ্রতি বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ টাকা। মাহিন্দ্রায় জনপ্রতি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এছাড়া কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে ২ নম্বর গেটের ভাড়া ছিল ৮ টাকা। ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। ক্ষেত্র বিশেষে ২০ টাকাও দাবি করা হচ্ছে।
এক সিটে একজন করে যাত্রী পরিবহনের নিয়ম করা হলেও এক সিটে দুজন করে যাত্রী পরিবহন করার দৃশ্য প্রায় চোখে পড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার তো বালাই ছিল না। নগরীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে, নির্দেশ মানছে না গণপরিবহনগুলো। বাড়তি ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি বাদুড়ঝোলা হয়ে গণপরিবহনে যাচ্ছে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানার ইচ্ছে নেই চালক-হেলপার, এমনকি যাত্রীদের মাঝেও। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ঠেকাতে পারছে না প্রশাসন।
পরিবহন নেতারা বলছেন, পরিবহন শ্রমিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে। ভাড়া নৈরাজ্য রোধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে বিআরটিএ, জেলা প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি যাত্রীদের। এ প্রসঙ্গে সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে বার বার বৈঠক করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইভাবে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারবে না। যদি এর অন্যথা হয়, অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।
এদিকে বাংলাদেশে যেখানে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার এখনও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী সেখানে বাসগুলো স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এমন অবস্থায় তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোরভাবে তদারকির পরামর্শ দেন।
বর্তমানে যে পরিস্থিতি সে হিসেবে এখনই আমাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার সময় আসেনি। কিন্তু আমাদের জনসংখ্যা এতো বেশি যে গণপরিবহনে এই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুব কঠিন। তারপরও যতোটা সম্ভব সেটা যেন প্রতিপালন করা হয় এজন্য সরকারের নজরদারি অনেক বাড়াতে হবে।
মতামত