সুপ্রভাত ডেস্ক »
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত ছিল, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে। তার জন্য ঋণগ্রহীতাদের নানা ছাড়ও দেওয়া। কিন্তু খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব হয়নি। বরং বাড়তে বাড়তে তা নতুন রেকর্ড গড়েছে। প্রথমবারের মতো দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বশেষ যে তিন মাসের তথ্য পাওয়া গেছে, সেই তিন মাসেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা।
রোববার (১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এ বছরের জুন পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। মোট যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল, খেলাপি ঋণ তার ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। খবর সারাবাংলা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৫ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত অর্থবছরের (২০২২-২৩) শেষ তিন মাস তথা এ বছরের এপ্রিল থেকে জুনে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছিল, তার অন্যতম শর্ত ছিল দেশে যেন খেলাপি ঋণের পরিমাণ না বাড়ে। ফলে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধে উদ্ধুদ্ধ করতে নানা ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকাকে ভয়াবহ মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি বলেও মনে করেন তিনি।
মির্জ্জা আজিজুল বলেন, ঋণ আদায়ের পরিবর্তে ঋণ যেন দিতে না হয়, সেজন্য একের পর এক সুবিধা দেয়া হয়েছে ঋণগ্রহীতাদের। বিশেষ করে সুদ কমিয়ে ও পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঋণের কিস্তির পরিমাণও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইএমএফের শর্ত পূরণে অনেক শর্তও শিথিল করা হয়েছে। তারপরেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এতে বোঝা যায় দেশে খেলাপি ঋণের অবস্থা কতটা ভয়াবহ।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত মানলে পুনর্তফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি হিসেবে দেখাতে হবে। সে হিসাবে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুন মাস শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। খেলাপি ঋণের এ অঙ্ক দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এর তিন মাস আগে মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। বছরের প্রথম তিন (জানুয়ারি-মার্চ) মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০২২ সালের জুনে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩০ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।
আইএমএফের শর্ত
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি ছয় কিস্তির মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় হওয়ার কথা আগামী নভেম্বরে। কয়েক ধাপে ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে সংস্থাটি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে।
খেলাপি ঋণসংক্রান্ত আইএমএফের শর্তে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ শতাংশ এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে সরকারি-বেসরকারি সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণের হার মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ পাওয়া গেছে। আর সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ হার প্রায় ২০ শতাংশ।