সুপ্রভাত বিনোদন ডেস্ক »
কয়েক বছর ধরেই সেন্সর বোর্ড সংস্কারের দাবি করে আসছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। তাদের মতে, বিশ্ব চলচ্চিত্রে সেন্সর সার্টিফিকেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে। অর্থাৎ চলচ্চিত্রটি দেখার পর বোর্ড কর্তৃপক্ষ একটি সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। যেখানে ছবিটি কোন বয়সের দর্শকদের দেখার জন্য যুক্তিযুক্ত, তা বলা হয়ে থাকে। এ রকম রেটিং থাকলে দর্শকরাই ঠিক করে নেবে তারা কোনটি দেখবে আর কোনটি দেখবে না। এদিকে সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে বেশকিছু আলোচিত সিনেমা। দেশের রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তন হয়েছে। আটকে থাকা ছবির ভাগ্য খুলতে চলেছে। এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গতকাল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে দফতর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন নাহিদ ইসলাম। সেখানে সেন্সর বোর্ড নিয়ে তিনি বলেন, ‘সেন্সর বোর্ডের কারণে যে ছবিগুলো আসেনি সেগুলো নিয়ে দ্রুতই বসব। দ্রুততার সঙ্গে সেন্সর বোর্ডকে পুনর্গঠন করব। সেন্সর বোর্ড না থাকার যে দাবি সেটিও আলোচনা করে যৌক্তিকতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।’
আমাদের তরুণ প্রজন্মের চলচ্চিত্রের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্মের চলচ্চিত্রের জায়গা থেকে অনেক আকাঙ্ক্ষা। তরুণ প্রজন্মের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না। তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করতে হবে।’ সম্প্রচার উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘অনেকগুলো চলচ্চিত্র সেন্সরড অবস্থায় আছে। সেগুলো পুনর্বিবেচনা করা উচিত। যদি নীতিমালা ভঙ্গ না হয়, সেই চলচ্চিত্রগুলোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি কিংবা ব্যক্তিগত পরিচয় যাতে বিবেচনায় না নেওয়া হয়।’
সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকা সিনেমাগুলো হলো-নজরুল ইসলাম খানের ‘রানা প্লাজা’, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’, এনামুল করিম নির্ঝরের ‘নমুনা’, রায়হান রাফির ওয়েব ফিল্ম ‘অমীমাংসিত’ অং রাখাইনের ‘আমার বাইসাইকেল-মর থেংগারি’ ও অনন্য মামুনের ‘মেকআপ’ ছবিটি। এর মধ্যে কোনো সিনেমা ১৫ বছর, আবার কোনোটি ৯ বছর ধরে আটকে রয়েছে।
শনিবার বিকাল
হলি আর্টিসানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা নিয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মাণ করেছেন সিনেমা ‘শনিবার বিকাল’। ২০১৯ সালে ছবিটি ছাড়পত্রের জন্য জমা দেন নির্মাতা। ছবিটি অজানা কারণে সেন্সর বোর্ডে আটকে রয়েছে। এতে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাহিদ হাসান, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইয়াদ হুরানি, নাদের চৌধুরী, ইরেশ যাকের, ইন্তেখাব দিনারসহ অনেকে।
অমীমাংসিত
আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করেছেন পরিচালক রায়হান রাফি। ওটিটির জন্য নির্মিত সিনেমাটি তিন মাস আগে ‘প্রদর্শন উপযোগী’ নয় বলে সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে চারটি কারণ উল্লেখ করে ছবিটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণগুলো হলো-১. চলচ্চিত্রটিতে নৃশংস খুনের দৃশ্য রয়েছে। ২. কাল্পনিক কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপের বিষয়বস্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিল রয়েছে। ৩. এ ধরনের কাহিনি বাস্তবে ঘটেছে। ৪. ঘটনা-সংশ্লিষ্ট মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন ও চলচ্চিত্রটির কাহিনি/বিষয়বস্তু বিচারাধীন মামলার সঙ্গে মিল থাকায় ভুল বার্তা দিতে পারে এবং তদন্তে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
রানা প্লাজা
সাভারের রানা প্লাজা ধ্বংসের ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘রানা প্লাজা’। ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তির পুরোপুরি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ছবির প্রযোজক। কিন্তু তার আগেই ছবির মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। দীর্ঘ ৯ বছর এই ছবিটি সেন্সর বোর্ডে আটকে রয়েছে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজার বিভীষিকাময় ধসের ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘রানা প্লাজা’। ছবিতে অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরীমনি। এটিই তার প্রথম সিনেমা। এতে তার বিপরীতে আছেন সায়মন সাদিক। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন শামীমা আক্তার।
আমার বাইসাইকেল-মর থেংগারি
চাকমা ভাষায় নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা ‘আমার বাইসাইকেল-মর থেংগারি’। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে আটকে রয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে জমা দিয়েছিলেন অং। জানা গেছে, ৬৪ মিনিটের ছবি থেকে ২৫ মিনিট কেটে ফেলতে বলেছে সেন্সর বোর্ড! তবেই মিলবে ছাড়পত্র। সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কামাল মনি চাকমা, ইন্দ্রিরা চাকমা, ইউ চিং হলা রাখাইন, বিনাই কান্তি চাকমা, আনন্দ চাকমা, সুভাষ চাকমা, জোরাদান চাকমা। ছবির গল্প পরিচালকের নিজের। চিত্রনাট্য করেছেন নাসিফুল ওয়ালিদ। প্রযোজনা করেছেন মা নান খিং। ছবিটির পরিবেশক খনা টকিজ।
মেকআপ
গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের ভেতরের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘মেকআপ’। সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন অনন্য মামুন। ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি আপিল বিভাগে সর্বশেষ শুনানি হয়। তাতে আপিল বোর্ড জানায়, ‘সিনেমাটি খুব দুর্বল নির্মাণ, দুর্বল চিত্রনাট্য, বাজে শটসহ নানা কারণেই এই ছবি প্রদর্শনের অযোগ্য।’ সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, রোশান, সাইফ চন্দন, কাজী উজ্জ্বল, পায়েল মুখার্জি ও বিশ্বনাথ।
নমুনা
সরকারি অনুদানে নির্মিত সিনেমা ‘নমুনা’। স্থপতি ও চলচ্চিত্র পরিচালক এনামুল করিম নির্ঝরের দ্বিতীয় সিনেমা এটি। জানা গেছে, সরকারি অনুদানের যেসব প্রক্রিয়া থাকে, সব মেনেই ছবিটি তৈরি করেন নির্ঝর। এরপর সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা দেন; কিন্তু ১৫ বছর ধরে ছবিটির ছাড়পত্র মিলছে না। বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে ছবিটি তৈরি হয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে, হাসিনা-খালেদার নেতিবাচক রাজনৈতিক গল্প উঠে এসেছে এই সিনেমায়। ছবিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তৈরি হলেও মুক্তির প্রাক্কালে ক্ষমতায় আসে হাসিনা সরকার। যথারীতি সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে আটকে যায়।