খালে তলিয়ে শিশুর মৃত্যু : দুই সংস্থাকে দুষছে চসিকের তদন্ত কমিটি

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকার কাপাসগোলায় হিজড়া খালে তলিয়ে ছয় মাসের শিশু আনাবিয়া মেহেরিন সেহরীশের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দুর্ঘটনার কারণ এবং প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ তুলে ধরেছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) জমা হওয়া ২৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজ শেষ না হওয়ায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় হিজড়া খালের সংস্কার কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি। তবে, নগরের জলাবদ্ধতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪-ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে এই খালের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান ছিল।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী— এ খালের পাশে বাঁশের তৈরি একটি বেষ্টনী ছিল। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হিজড়া খাল থেকে মাটি ও আবর্জনা অপসারণের সুবিধার্থে খাল পাড়ের সম্মুখের কিছু অংশে নিরাপত্তা বেষ্টনী সাময়িকভাবে অপসারণ করা হয়। মাটি ও আবর্জনা অপসারণ কার্যক্রম চলমান থাকায় সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনীটি পুনরায় স্থাপন করা হয়নি এবং উক্ত অরক্ষিত অংশেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

যদিও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের আওতাধীন ৩৬টি খালের মধ্যে হিজড়া খালের কাজ এখনও তারা শুরু করেনি। এখানে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা রয়েছে।

তদন্ত কমিটি সেদিনের ঘটনার বিষয়ে যা জানিয়েছে

গত ১৮ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে চকবাজার ওয়ার্ডের কাপাসগোলা এলাকার নবাব হোটেল সংলগ্ন হিজড়া খালে একটি রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায়। এতে চালকের পাশাপাশি ৬ মাসের শিশু সেহরীশ, তার মা সালমা ও দাদী আয়েশাসহ তিন যাত্রী ছিলেন। রিকশাটি কাপাসগোলা নবাব হোটেলের সামনের মোড় ঘুরে পাশের রাস্তায় ২০-২৫ ফুট ভেতরে প্রবেশ করে। রাস্তাটির পাশেই হিজড়া খাল বহমান। ভারী বর্ষণের ফলে খালের পানি ফুলে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় খাল ও রাস্তার প্রকৃত গতিপথ বোঝা মুশকিল ছিল।

রাস্তার ডানপাশে ভবন এবং বামপাশে খাল থাকায় নিহত সেহরীশের মা সালমা নিরাপত্তার স্বার্থে চালককে রাস্তার ডানপাশ ঘেঁষে গাড়ি চালানোর জন্য তিনবার অনুরোধ করেন। কিন্তু চালক তাতে কর্ণপাত করেননি। আবার রাস্তাটির ঢালু অংশে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চালক তার আসন থেকে নেমে রিকশাটি হাতে টানার কথা থাকলেও অনুরোধ অগ্রাহ্য করে তিনি তার আসনে বসেই চালাচ্ছিলেন। ফলে রিকশার গতি নিয়ন্ত্রণ তার জন্য সহজ ছিল না। চালকের অদক্ষতা ও অসচেতনতার কারণে হিজড়া খালের শুরুতে যে অংশটিতে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না, সেই অংশের শেষ প্রান্তে রিকশাটি খালে পড়ে যায়।

খালে পড়ে যাওয়ার পর অর্ধ-ডুবন্ত থাকলেও তৎক্ষণাৎ রিকশাচালক যাত্রীদের তোলার চেষ্টা করেননি। বরং রিকশার ওপর ভর দিয়ে তিনি রাস্তায় উঠে পালিয়ে যান। চালকের ভরে রিকশাটি খালে সম্পূর্ণরূপে ডুবে যায়। এ সময় যাত্রী বেগম উম্মে সালমা অজ্ঞান হয়ে গেলে শিশু সেহরীশ তার হাত থেকে ছুটে যায়। স্রোতের কারণে শিশুর মা সালমা ও দাদী বেগম আয়েশা ভেসে যান। পরবর্তীতে মা ও দাদীকে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ হয় শিশু।

দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীর ৩৪-ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের একটি দল, নৌবাহিনীর একটি ডুবুরি দল রাতভর এবং পরদিন খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত হিজড়া খাল, সংযুক্ত নালা ও চাক্তাই খাল এলাকার প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করেন। ১৪ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে শুঁটকি পল্লী এলাকার ইব্রাহীম ভবনের নিকটে চাক্তাই খাল থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

এ ঘটনায় গঠিত ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (সিসিসি) সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন ও সদস্য সচিব সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল। এ ছাড়া, কমিটিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি ছিলেন।

সেহরীশের মৃত্যুর ৮ কারণ

সেহরীশের মৃত্যুর পেছনে মূল কারণগুলো হলো- অরক্ষিত খাল, অদক্ষ রিকশাচালক ও বেপরোয়া গতি, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত না থাকা, অপ্রশস্ত সড়ক, বৃষ্টিপাতে পানিতে সড়ক ডুবে যাওয়া, খাল ও নালায় বর্জ্য জমে থাকা, উদ্ধার তৎপরতার জন্য পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জামের অভাব এবং জনসচেতনতাহীনতা।

২০১৭ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নগরীতে খাল-নালায় পড়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ এবং ছয়জন নারী। তাদের বয়স ছয় মাস থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত। এসব ঘটনায় সাতজন নালায় পড়ে এবং অন্য আটজন খালে পড়ে মারা যান। খালে পড়ে মৃত্যুর এসব ঘটনা ঘটেছে নগরীর চাক্তাই খাল, চশমা খাল, নাছির খাল ও হিজড়া খালে। এর মধ্যে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে একজন করে, ২০২১ সালে পাঁচজন, ২০২৩ সালে তিনজন, ২০২৪ সালে চারজন এবং চলতি বছর দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ঘেরা চট্টগ্রাম শহর সমুদ্র, পাহাড়, নদী ও সমতল ভূমির সংযোগস্থলে অবস্থিত। গত কয়েক দশকে পানি নিষ্কাশনের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনাহীন নগরায়ণের ফলে শহরটি জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে। ১৯৯৫ সালে ইউএনডিপি ও ইউএনসিএইচএসের সহায়তায় সিডিএ একটি ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে, যার বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ২০ বছরের পরিকল্পনার (১৯৯৫-২০১৫) আওতায় শহরকে ১২টি ড্রেনেজ জোনে ভাগ করে তিনটি নতুন খাল খননের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু অর্থ সংকট ও বাস্তবায়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতায় এই পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ হয়ে পড়ে।

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত চসিক, সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ওয়াসা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে গত এক দশকের বেশি সময় কোনো কার্যকর সমন্বয় না থাকায় সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। একদিকে খাল ও নালা দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা, অন্যদিকে নিয়মিত পরিষ্কারের অভাবে নালা-নর্দমা জর্জরিত হয়ে উঠেছে প্লাস্টিক, মাটি ও বর্জ্যে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে আসে, খালের ওপর অপরিকল্পিত কালভার্ট, ত্রুটিপূর্ণ নকশা, পাইপলাইন স্থাপন, পুকুর ভরাট, পাহাড় কাটা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থায় নির্মাণ সামগ্রী ফেলা— সবমিলিয়ে মানবসৃষ্ট কারণগুলোই ৬৩ শতাংশ ক্ষেত্রে জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী। আর প্রাকৃতিক কারণ, যেমন- অতিবৃষ্টি, নদী ও সমুদ্র ঘেঁষা অবস্থান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ৩৭ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী।

বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামে তিনটি প্রধান ঝুঁকির বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে— জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধস ও খাল-নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনা।

সবমিলিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে খালে বা নালায় তলিয়ে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উন্মুক্ত ও অরক্ষিত খাল-নালা, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত না হওয়া, সমন্বয়ের অভাব, রাতের বেলা পর্যাপ্ত আলো না থাকা, জরুরি টিমের অভাব, জলাবদ্ধতা, অসচেতনতা, খাল-নালায় বিভিন্ন ইউটিলিটি সংস্থার পাইপ দ্বারা সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা এবং বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়।

তদন্ত কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে 

তদন্ত কমিটি তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি— এই চার পর্যায়ে সুপারিশ দিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে সেখানে নিরাপত্তাবেষ্টনী ও প্রতিবন্ধকতা স্থাপন এবং স্বল্প মেয়াদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ, খাল পুনঃখনন ও সংরক্ষণ, বালুর ফাঁদ নির্মাণ, স্মার্ট ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া, মধ্য মেয়াদে খালগুলোতে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা ও ফুটপাতে ছিদ্রযুক্ত ঢালাই স্ল্যাব বসানো এবং দীর্ঘ মেয়াদে নগর সরকার বাস্তবায়ন, সমন্বিত নগর পরিকল্পনা, দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধার, ফুটপাত সংস্কার ও পাহাড় কাটা বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেও দেওয়া হবে।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা আলোচনা করে পদক্ষেপ নেব।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে ১৪ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পগুলোতে খাল পুনঃখনন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, রেগুলেটর স্থাপন এবং সড়ক নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব প্রকল্পের আওতায় থাকা খাল-নালা দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে বছরের পর বছর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন পথচলতি মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরের খাল পুনঃখনন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খাল পুনঃখনন ও সংস্কার করার কথা ছিল। এই প্রকল্পের ৮০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে খাল উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নানা সমস্যায় প্রকল্পটি এখনও শেষ করা যায়নি। অন্যদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২৩টি খালের মুখে রেগুলেটর স্থাপন ও ১৯ কিলোমিটার বন্যা প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। তবে, নানা কারণে এই প্রকল্পের কাজেরও যথাযথ অগ্রগতি হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, পুরো রিপোর্টটি পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে— উনারা দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রিকশাচালককে বেশি দায়ী করে ফেলেছেন। অথচ উনারা উল্লেখ করেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কোনো চিহ্ন ছিল না। আমার কাছে মনে হয়, যেখানে কোনো সংস্কার বা নির্মাণের কাজ চলে, সেখানে সাইনবোর্ড এবং রাতে পর্যাপ্ত আলো থাকা দরকার। পাশাপাশি নিরাপত্তার বেষ্টনী অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে— সেখানে কোনো বেষ্টনী ছিল না। এক্ষেত্রে যারা সেখানে কাজ করছে এবং বেষ্টনী সরিয়েছে, তারাই সর্বোচ্চ দায়ী।

তিনি আরও বলেন, রিপোর্টে যে সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলোর আমরা বাস্তবায়ন চাই। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এ ধরনের রিপোর্ট নিয়ে পরবর্তী সময়ে কোনো কাজ হয় না। এগুলো কাগজেই বন্দী থাকে। রিপোর্টে উল্লেখ আছে— ২০১৭ সাল থেকে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। বছরের পর বছর কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে দুর্ঘটনাও বন্ধ হচ্ছে না। তাহলে সুপারিশমালা বাস্তবায়ন কবে নাগাদ শুরু হবে, সেগুলো সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের জনগণকে জানানো উচিত। অন্তত নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া এবং যেখানে কাজ চলমান আছে, সেখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা এখনই শুরু করা যেতে পারে।

চসিকে জমা হওয়া প্রতিবেদনের বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামসের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড। প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, এটা (রিপোর্ট) বিভ্রান্তিকর মন্তব্য। কারণ, আমাদের আওতাধীন ৩৬টির মধ্যে হিজড়া খালের কাজ আমরা ধরিনি। এখানে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা রয়েছে। আর ভূমি অধিগ্রহণ করা না হলে সুউচ্চ ভবন অপসারণ করে খাল পুনরায় খনন ও রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত শহরের সব খালেই আমরা কাজ করছি, হিজড়া খাল বাদে।

সুতরাং এ খালে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, সেজন্য আমাদের আসলে দুঃখ প্রকাশ ছাড়া কিছুই করার নেই। যদি এক্ষেত্রে আমাদেরকে কেউ দায়বদ্ধ করে থাকে, তাহলে তা দুঃখজনক। ঘটনা ঘটার পর সিটি কর্পোরেশন ঘটনাস্থলে বেষ্টনী দিয়েছে। ঘটনার আগে তো এখানে কোনো বেষ্টনীই ছিল না।