একই বাসায় আর ৮ জন শনাক্ত
সুপ্রভাত ডেস্ক <
ঢাকার গুলশানে খালেদা জিয়া যে বাড়িতে থাকছেন, সেই ‘ফিরোজায়’ তিনিসহ নয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
গতকাল রোববার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে আসার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের একথা জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক মো. আল মামুন। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, ‘ম্যাডামসহ মোট নয়জন আক্রান্ত।’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিবরণ দিয়ে মামুন বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে ম্যাডামের ফিজিক্যাল কন্ডিশন ভালো। কোনো উপসর্গ তার নেই। জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট কোনো কিছুই নাই।’
তাহলে কেন নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ল- তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘বাসার একজন স্টাফের আরও ৫/৬ দিন আগে জ্বরজ্বর ভাব ছিলো। তখন তার টেস্ট করানো হয়। টেস্টের রেজাল্ট পজিটিভ আসে।
‘পজিটিভ আসার পরে ওই স্টাফ যে রুমে থাকত, ওই রুমে বাকিদেরও আমরা চেক করাই। তখন তাদেরও পজিটিভ আসে। তখন সেফটি পারপাসে ম্যাডামের টেস্ট গতকাল করানো হয়, এরপর পজিটিভ আসে সেই রেজাল্টও।’
খালেদা জিয়ার সবসময়ের গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমও আক্রান্ত কি না-জানতে চাইলে ডা. মামুন ‘হ্যাঁ’ সূচক মন্তব্য করেন।
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
গত বছর দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে গুলশানের এই বাড়িতেই রয়েছেন তিনি। এই এক বছরে নিকটাত্মীয় ছাড়া বিএনপি নেতারা কালেভদ্রেই তার দেখা পেয়েছিলেন। খবর বিডিনিউজ।
গত শনিবার ডা. মামুন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে আসার পর তার নমুনা পরীক্ষা করানোর খবর ছড়ালেও তা নাকচ করছিল বিএনপি।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার কোভিড-১৯ আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করা হলেও তা নাকচ করেছিলেন ডা. মামুন।
তবে এরপর জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেত্রীর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর স্বীকার করেন। তারপরই খালেদা জিয়ার বাড়িতে যান ডা. মামুন।
এর আগে স্বীকার না করার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একজন ডাক্তার হিসেবে প্রত্যেকটা রোগীর প্রাইভেসি রক্ষা করা আমার ঈমানী দায়িত্ব। ডাক্তারের রুলসে তাই বলে।
‘সকাল থেকে অনেকে ফোন করেছে। কিন্তু আমি পুরোপুরি জিনিসটাকে এবোর্ট করার চেষ্টা করেছি। এখন যেহেতু পজেটিভ ফলাফল এসেছে, তা মহাসচিব (ফখরুল) বলেছেন। ডাক্তার হিসেবে যেটা আমার করার, সেটা আমি করেছি।’
৭৫ বছর বয়সী খালেদা নানা জটিলতায় ভুগছেন। এর মধ্যে তার করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটল।
তার চিকিৎসা নিয়ে ডা. মামুন বলেন, ‘ম্যাডামের যে মেডিক্যাল বোর্ড আছে, সেই বোর্ড নিয়মিত আলোচনা করে তার চিকিৎসা চালাচ্ছে।
‘এখন পর্যন্ত তার অবস্থা স্টেবল আছে। আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি। আমরা প্রাইভেট হসপিটালে একটা কেবিন ঠিক করে রেখেছি। বাসায় একটা হসপিটাল করা হয়েছে, এখানে সব কিছুর প্রিপারেশন আছে, সব অ্যারেঞ্জমেন্ট আগের থেকে করে রাখা হয়েছে।’
বাসায় যারা আক্রান্ত, সবারই চিকিৎসা চলছে বলে জানান এই চিকিৎসক।
বিকালে ‘ফিরোজায়’ গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তাকর্মীরা ফটকের বাইরে পাহারা দিচ্ছেন।
নিরাপত্তাকর্মীদের একজন বলেন, ‘ম্যাডাম দোতলায় আছেন। কারও প্রবেশাধিকার এখন আর নেই সেখানে। আগে কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন আসতেন। আজকে কেউ আসেননি। তারা টেলিফোনে ম্যাডামের খোঁজ-খবর রাখছেন।’
খালেদা জিয়ার বোন ও ভাই বিভিন্ন সময় তার খোঁজ-খবর নিতে ফিরোজায় যান। তার বড় ছেলে তারেক রহমান দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।
এর আগে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল মামুন দাবি করেছিলেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়ার নমুনাই নেওয়া হয়নি।
রোববার নমুনা পরীক্ষার একটি প্রতিবেদন আসে সোশাল মিডিয়ায়। ‘করোনাভাইরাস পজিটিভ’ ওই প্রতিবেদন খালেদা জিয়ার বলে লেখা রয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করলে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদন দেখায়। যেখানে রোগীর নাম দেখায় বেগম খালেদা জিয়া। আর আইসিডিডিআর,বিতে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
এই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান রোববার দুপুরে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে উনার (খালেদা) করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।’