সুপ্রভাত ডেস্ক »
দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে তার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে সরকার।
মুক্তির এই মেয়াদেও চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার আবেদনে সাড়া মেলেনি সরকারের কাছ থেকে।
বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ আবু সাঈদ মোল্লার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
এই নিয়ে আট দফায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়ল।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতাদেশ কার্যকর হবে গত ২৫ মার্চ থেকে। এবারও শর্ত রয়েছে খালেদা জিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং এই সময়ে তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
পুরনো শর্তেই নতুন করে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ছে বলে কিছুদিন আগে আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।
সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একই শর্তে তার সাজা স্থগিত রেখে তার মুক্তির আদেশ আরো ছয় মাসের জন্য বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এই মতামত দিয়ে ফাইলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে মতামত দিলেও বিদেশে যাওয়ার অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার বিষয়টি আগেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই শুধু মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া।
সরকারপ্রধান চাইলে খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে কিনা জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেছিলেন, সরকারপ্রধান মানে হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি যেহেতু এটা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন, এখন এটা পরিবর্তন করার আইনি কোনো বিধান নেই।
সরকার প্রধানকে আইনের ভেতরে থেকে মানবিক বিবেচনা করতে হবে। আইনের বাইরে গিয়ে তিনি মানবিক কারণ দেখাতে পারবেন না। তিনি তার মানবিক কারণ কিন্তু প্রথম বারেই দেখিয়েছেন এবং এই যে বার বার রিনিউ হচ্ছে সেটা মানবিক কারণ থেকেই হচ্ছে।
বোনের স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে ৬ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মতামতের জন্য পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বুধবার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।
এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দ- ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
এর পর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।
সাময়িক মুক্তির পর থেকে খালেদা জিয়া রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাকে চেয়ারম্যান রেখে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপি চালাচ্ছেন ছেলে তারেক রহমান। তাকে করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। খবর বিডিনিউজ।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিস ও হৃদ্রোগে ভুগছেন। সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড গতবছর অক্টোবরে জানায়, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। দ্রুত ‘বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে’ তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।
কিন্তু সরকার তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেওয়ায় বিদেশ থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ঢাকায় এনে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভারে ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) সম্পন্ন করা হয়।