খাদ্য সংকট : জাহাজে নিত্যপণ্য গেলো সেন্টমার্টিনে

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের জেরে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে এক সপ্তাহ ধরে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দা গত তিন-চার দিন ধরে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংকটে পড়েছেন।
তাদের সংকট থেকে মুক্তি দিতে গতকাল শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ‘এমভি বারো আউলিয়া’ নামে একটি জাহাজে করে খাদ্যপণ্য পাঠানো হয়েছে দ্বীপটিতে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
এডিএম ইয়ামিন হোসেন বলেন, দ্বীপের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমন্বয় করে জাহাজটি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারে আটকা পড়া সেন্টমার্টিনের অনেক বাসিন্দা এই জাহাজে করে ফিরবেন।
শুক্রবার সকাল ১০টায় বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ‘এমভি বারো আউলিয়া’ জাহাজে তোলা হচ্ছে চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ নানা ধরনের নিত্যপণ্য। একই সঙ্গে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারাও জড়ো হচ্ছেন নিজ এলাকায় ফেরার জন্য।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ ওয়াসিম বলেন, ‘দীর্ঘ অপেক্ষার পর আজ (গতকাল) ৮দিন বাদে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য ঘাটে এসেছি। এখানে এসে দেখতে পাচ্ছি নিত্যপণ্য যাচ্ছে। আমাদের জন্য খুবই উপকার হবে।’
৮দিন পর নিজ এলাকায় যাওয়ার জন্য ঘাটে অপেক্ষা করা সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা আয়েশা ছিদ্দিকা বলেন, ‘চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার এসে আটকে পড়েছিলাম। দুইদিন আগে চিকিৎসা শেষ হলেও সেন্টমার্টিন যেতে পারছিলাম না। অবশেষে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নিজ এলাকায় ফিরে যেতে পেরে ভালো লাগছে।’
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘চার-পাঁচদিন ধরে দ্বীপে কাঁচা সবজি একেবারে নেই। মুদির দোকান থেকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডাল, চিনিসহ নিত্যপণ্য দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে নাফ নদীর নাইক্ষংদিয়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশি ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। এ কারণে সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে দ্বীপটিতে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। অবশেষে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কক্সবাজার থেকে খাদ্যপণ্য নিয়ে জাহাজ আসছে। একই সঙ্গে কক্সবাজারে আটকে পড়া বাসিন্দারাও ফিরছেন।’
এদিকে, সাত দিন পর বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সেন্টমার্টিন থেকে তিনটি ট্রলারে করে দুই শতাধিক হোটেল শ্রমিক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ টেকনাফ পৌঁছেছেন। এ সময় টেকনাফ থেকে চারটি ট্রলারে করে তিন শতাধিক লোক সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা হন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে চারটি ট্রলার লোকজন নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যায়। সেখান থেকে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ টেকনাফে ফিরে আসেন। এসময় বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদার করেছিলেন।