প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশে খাদ্যনিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থায় ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অনুপাতে বাড়ছে না খাদ্যশস্যের উৎপাদন। প্রতিনিয়তই কমছে কৃষিজমি। নকল ও নিম্নমানের বীজে সয়লাব বাজার। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে জমিতে এসব বীজ বপনের পর কাঙ্ক্ষিত ফলন পাছেন না কৃষক। খরচ বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে উৎপাদন হচ্ছে না নিরাপদ ফসল। হুমকিতে পড়ছে দেশের খাদ্য ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তা।
তাঁরা মনে করেন, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য এখন কৃষি ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় মনোনিবেশ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে প্রাণ-প্রকৃতি ঠিক রাখার কাজে। কৃষকরা যেন পরিবেশ, মাটি, পানি, বাতাসের কোনো ক্ষতি না করে ফসল উৎপাদন করতে পারেন, সেজন্য সরকারকে কিছু নিয়মনীতি তৈরি করে দিতে হবে। নিয়মনীতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও রাখতে হবে অগ্রণী ভূমিকা।
বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি, জলবায়ু পরিবর্তন, ঋতুবৈচিত্র্যের ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীনতা, অনিয়মিত বৃষ্টি (অতিবৃষ্টি কিংবা অনাবৃষ্টি), আন্তর্জাতিক নদ-নদীর পানি প্রত্যাহার ও প্রবাহপথের পরিবর্তন, উৎস থেকে প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ হ্রাস, পলি পতন আর কূলের ভাঙনজনিত নাব্য হ্রাস, অতিমাত্রায় ব্যবহারের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির উৎসের গভীরতা বৃদ্ধি, লবণাক্ত পানির আগ্রাসন প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশের কৃষক দিন দিন পানিহারা হয়ে পড়ছেন। শুষ্ক মৌসুম, অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত বর্ষা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ধান এবং অন্য সব দেশি প্রজাতির বীজ সংরক্ষণ ও নতুন দেশীয় উদ্ভাবনকে টেকসই করতে অঞ্চলভিত্তিক ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বাজার চাহিদা ও রফতানি সম্ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফসল উৎপাদনের টার্গেট নির্ধারণ, কৃষককে বীজ নিরাপত্তা, সেচ ও সারের নিশ্চয়তা এবং উৎপাদিত ফসলের ন্যূনতম দাম নির্ধারিত ন্যায্য লভাংশ্যসহ নিশ্চিত করা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো, মজুদকরণ আর পণ্য পরিবহন সহজীকরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এর বাইরে আছে বীজ নিরাপত্তা, অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার রোধ, জৈবসারের সুলভতা নিশ্চিতকরণ।
বাজার চাহিদা নির্ণয়ের ব্যাপারটি আসলেই সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বর্তায়। কৃষক, তার সামর্থ্য, বিভিন্ন ফসলের উৎপাদনের মাত্রা ও প্রয়োজনীয়তা, সংরক্ষণের সক্ষমতা এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে।
যে করেই হোক দেশের খাদ্য উৎপাদন ঠিক রেখে খাদ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে কম জমি বেশি লোকের দেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পর্যাপ্ত উৎপাদন করে জাতিকে খাদ্যে নিরাপদ রাখা।