খণদাতার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করলেন নারী উদ্যোক্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ও তার ব্যক্তিগত সহকারী এবং ইসলামী ব্যাকের পদচ্যুত ডিএমডি আকিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে ২৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নাজমে নওরোজ নামে এক নারী উদ্যেক্তা।

নাজমে নওরোজ চট্টগ্রামে লা অ্যারিস্টোক্রেসি এবং ফিউশন ইট নামে দুটি রেস্টুরেন্টের মালিক।

আদালত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

২০০৮ সালে পার্টনারশিপে চট্টগ্রামের এসএস খালেদ রোডের সিপিডিএল ভবনে লা এরিস্টোক্রেসি চালু করে নাজমে নওরোজ।

ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, ২০১১ সালে বাকি দু’জন পার্টনার তাদের অংশীদারত্ব ছেড়ে দিলে তা কিনতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের মহিলা শাখা ঋণ নেন এই উদ্যোক্তা। এরপর রেস্তোরাঁর ব্যবসা সম্প্রসারণের কারণ উল্লেখ করে কালক্রমে আরও ঋণ নিয়েছেন। আর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ।

মামলায় নাজমে নওরোজ নামে ওই ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদকে দ্বিতীয় ও তার ব্যক্তিগত সহকারী আকিজ উদ্দিনকে প্রথম আসামি করেন।

বাদী নাজমে নওরোজ বলেন, ‘আমি ২৯ কোটি টাকা ফেরত চাইলে আকিজ উদ্দিন আমাকে গুম ও হত্যার হুমকি দিতেন। তারা (এস আলম গ্রুপ) আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এখন পর্যন্ত ভয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।’

বাদীর আইনজীবী শুভঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে নাজমে নওরোজ নামে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আকিজ উদ্দিন কয়েক দফায় ২৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। সাইফুল ইসলাম মাসুদেরও এখানে যোগসাজেশ আছে। টাকা ফেরত চাইলে তাকে অপহরণ করে খুন করারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। আদালত মামলা গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।’

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, তিনি একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি নগরীর লা অ্যারিস্টোক্রেসি রেস্টুরেন্টের মালিক। রেস্টুরেন্টটির আগে তিনজন শেয়ার হোল্ডার ছিলেন। পরে তিনি বাকি দুজন থেকে সব শেয়ার কিনে একক মালিকানায় ওই রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করে আসছিলেন। সে সুবাদে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ও পারিবারিক সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে সাইফুল ইসলাম মাসুদ ব্যবসা বাড়ানোর জন্য তার মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক কাজির দেউড়ি মহিলা শাখা থেকে প্রথমে দুই কোটি টাকা ঋণ দেন।

এরপর সাইফুল ইসলাম ওই নারীকে তার ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে আকিজ উদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। আকিজ তাকে বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করার নামে ওই ব্যাংক থেকে কয়েক দফায় মোট ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিতে সহযোগিতা করেন। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এই ঋণগুলো নেওয়া হয়।

এ সুযোগে আকিজ উদ্দিন ব্যাংকে ঋণের বিপরীতে থাকা ওই নারীর সই করা খালি চেকের মাধ্যমে ও ধার হিসেবে কয়েক দফায় ২৯ কোটি টাকা আত্মসাত করেন। চলতি বছরের ২২ জুলাই নাজমে নওরোজ টাকাগুলো ফেরত চাইলে তাকে খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দেন আকিজ উদ্দিন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাইফুল আলম মাসুদ আর দেশে ফিরে আসেননি। আর পলাতক রয়েছেন আকিজ উদ্দিন।