সুপ্রভাত ডেস্ক »
ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দেশের প্রাপ্তবয়স্ক অর্ধেকের বেশি মানুষকে কমপক্ষে এক ডোজের আওতায় আনায় বিশ্বজুড়ে আবারও টিকার রপ্তানি শুরুর আশা দেখছে ভারত। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশটি রপ্তানিকারক হিসেবে ফিরবে এবং তা আগামী বছরের শুরুতে বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে ৬ কোটি ৬০ লাখ ডোজ টিকা দান অথবা বিক্রির পর চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝের দিকে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। ওই সময় করোনা সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করায় দেশে টিকাদানে অগ্রাধিকার দিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের টিকার রপ্তানি নিষিদ্ধ করে।
আচমকা টিকার রপ্তানি বন্ধের ফলে দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক দেশে টিকাদান কর্মসূচি থমকে যায়। ভারতে দৈনিক টিকাদানের রেকর্ড হয়েছে গত শুক্রবার। ওই দিন দেশটিতে একদিনে ১ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়। গত এপ্রিলের তুলনায় বর্তমানে টিকার উৎপাদনও দ্বিগুণ করেছে ভারত এবং আগামী সপ্তাহগুলোতে তা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
এছাড়া টিকা উৎপাদনের নতুন স্থাপনা তৈরি, কাদিলা হেলথকেয়ারের তৈরি করোনার নতুন একটি ভ্যাকসিনের সাম্প্রতিক অনুমোদন এবং রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ টিকার ভারতে উৎপাদনের অনুমতিও মিলেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) বর্তমানে মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রায় ১৫ কোটি ডোজ উৎপাদন করছে; যা গত এপ্রিলে উৎপাদিত সাড় ৬ কোটি ডোজের দ্বিগুণেরও বেশি বলে সেরামের উৎপাদনের ব্যাপারে অবগত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অস্বীকার করে তিনি বলেন, রপ্তানি শুরুর নির্ধারিত কোনও সময়সীমা নেই। তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পুনরায় রপ্তানি শুরু হতে পারে বলে কোম্পানি আশা করছে।
এর আগে, চলতি বছরের শেষের দিকে টিকার রপ্তানি শুরু হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিল সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। কবে নাগাদ এই রপ্তানি শুরু হতে পারে সে বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করলেও কোনও সাড়া পায়নি রয়টার্স। অনুন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর করোনা টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকল্প কোভ্যাক্স ভারত করোনা টিকার পুনরায় বিক্রি শিগগিরই শুরু করবে বলে আশাপ্রকাশ করছে।
কোভ্যাক্সের সহযোগী বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট গাভির একজন মুখপাত্র এক ই-মেইলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ভারতজুড়ে সফল টিকাদান এবং টিকার অধিক উৎপাদনের ফলে আমরা আশা করছি, কোভ্যাক্সে ভারতের টিকার সরবরাহ খুব শিগগিরই শুরু হবে।
তিনি বলেছেন, অন্যান্য অনেক ভ্যাকসিনের প্রধান উৎপাদনকারী ভারত বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একই ধরনের রূপান্তরিত ভূমিকা পালন করতে পারে।
ভ্যাকসিনের রফতানি সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ভারতের স্বাস্থ্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। ভারতের প্রথম স্থানীয়ভাবে তৈরি করোনা টিকার প্রস্তুতকারক ভারত বায়োটেক তাদের নতুন একটি উৎপাদন স্থাপনার উদ্বোধন করেছে। নতুন এই কারখানায় প্রত্যেক মাসে গড়ে এক কোটি ডোজ টিকার উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে।
ভারত বায়োটেক বলেছে, তারা কোভ্যাক্সিনের বার্ষিক মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০০ কোটি ডোজের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এপ্রিল এবং মে মাসের বিস্ফোরক প্রাদুর্ভাবের পর ভারতে আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬৩ কোটি ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। দেশটির মোট প্রাপ্তবয়স্ক ৯৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে কমপক্ষে ৫২ শতাংশকে অন্তত একডোজ এবং ১৫ শতাংশের বেশি মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
দেশটির সরকারি একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষকে টিকা দেওয়ার পর টিকাদানের গতি ধীর হয়ে যায়। যে কারণে উৎপাদিত অতিরিক্ত টিকার রপ্তানির একটি সুযোগ পেতে পারে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধান চলতি মাসে বলেছিলেন, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝে ভারত মাসে ১১০ কোটি ডোজ পর্যন্ত উৎপাদন করতে পারে। যা চলতি বছরেই দেশের পূর্ণ বয়স্ক সব মানুষকে টিকাদানের জন্য পর্যাপ্ত।
ভারত এখন পর্যন্ত জরুরি ব্যবহারের জন্য মোট ৬টি করোনা টিকার অনুমোদন দিয়েছে; এরমধ্যে চারটিই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। এছাড়া দেশটিতে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষে স্থানীয়ভাবে তৈরি আরও একটি ভ্যাকসিন শিগগিরই অনুমোদন পেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
এ মুহূর্তের সংবাদ