নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক নিয়ে সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। শত চেষ্টা করেও গত ছয় বছরে তাদের নিজ দেশে ফেরানো যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যত দেরি হচ্ছে ততই বাড়ছে ঝুঁকি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অনেকেই প্রতিদিন বিনা অনুমতিতে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে জনপদে ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্ত হচ্ছে নানা অপরাধের সঙ্গে। এতে নতুন করে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
গতকাল বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলামের নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকতা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল কক্সবাজার সদরস্থ লিংরোড সড়কে টেকনাফ-কক্সবাজারমুখি গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে আসা ৫৮ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে।
ডিবি পুলিশ জানায়, শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনী ফাঁকি দিয়ে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে কৌশলে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এভাবে পালাতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধরা পড়ছে তারা। কাজের সন্ধানে তারা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি অশান্ত হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। ক্যাম্পে অস্ত্র ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তার, মাদক বিক্রি এবং মাদকের টাকার ভাগ-বাটোয়ারাসহ নানান বিষয় নিয়েও ঘটেছে অনেক মারামারি-খুনাখুনির ঘটনা। আটক রোহিঙ্গাদের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উখিয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের সিআইসির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা প্রতিক্রিয়াধীন।
এছাড়া মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উখিয়ায় পুলিশ ও এপিবিএন যৌথ অভিযান চালিয়ে ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। পরে এদের যাচাই বাছাই করে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী।
৮ এপিবিএনের অধিনায়ক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) মো. আমির জাফর বলেন, আটক রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কাজের সন্ধানে বের হচ্ছে। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সড়কের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ১০টি চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে বিভিন্নস্থানে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়।
উখিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, এর আগে সোমবার ৫৫ জন, রোববার ২৯ জন এবং শনিবার ২৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের নিজ নিজ ক্যাম্প প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসা ঠেকাতে পুলিশ কঠোর নজরদারি শুরু করেছে। অনেকে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পের নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে আসে। এটা ঠেকাতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রতিদিন বিভিন্নভাবে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা পালিয়ে যাচ্ছে। অল্প রোহিঙ্গা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে। যদি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তারা ঠিকই আবার পরের দিন বের হবে। অভিযানে আটকদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।