সুপ্রভাত স্পোর্টস ডেস্ক »
গায়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের ট্যাগ, স্বাভাবিকভাবে ছিল দলটাকে নিয়ে পাহাড় সমান প্রত্যাশা। ২০২০ বিশ্বকাপে আকবর আলীর নেতৃত্বে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতে বাংলাদেশ। যা ছিল বাংলাদেশের প্রথম কোনো বৈশ্বিক ট্রফি জয়। এবারও একই লক্ষ্যে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা ধরে রাখার মিশন নিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছিল বাংলাদেশ যুব দল।
কিন্তু স্বপ্নের অনেক দূরে থাকতেই থেমে গেল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। ভারতের বিপক্ষে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিলো যুব বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।
চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় ইংল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে আসর শুরু। মাঝে ছোট দুই প্রতিপক্ষ কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে অনায়াস দুই জয়। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনাল মঞ্চে এসে আবার সেই ব্যাটিং ব্যর্থতা। আগের বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এবার তাদের বিপক্ষে লড়াই জমাতেই পারল না যুবারা।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। এদিন এক ইনিংস পরই মূলত ম্যাচের গতিপথ ঠিক হয়ে যায়। ভারতীয় যুবাদের তোপে রাকিবুল হাসানের দল গুটিয়ে যায় মাত্র ১১১ রানে। ওই রান তুলতে ৫ উইকেট হারাতে হলেও ১১৫ বল বাকি রেখে ম্যাচ শেষ করে ফেলে ভারত।
রান তাড়ায় নামা ভারতকে দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত দিতে পেরেছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। তার বলে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হারনুর সিং। তখনো রানের খাতা খুলেনি ভারত। কিন্তু এরপর খেলা একদম সহজ করে দেন আংক্রিশ রাঘুভানসি ও শেখ রাশিদ। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনে মিলে গড়েন ৭০ রানের জুটি। তাতেই ম্যাচ বেরিয়ে যায়।
ইতিবাচক অ্যাপ্রোচে রাঘুভানসি এগুচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। রিপন মন্ডল এসে ছেদ দেন তার পথ চলায়। রিপনের বলে কাট করে পয়েন্টে ধরা দেন ৬৫ বলে ৪৪ করা এই ডানহাতি ব্যাটার। নিজের পরের ওভারের প্রথম বলেই রাশিদকে কট বিহাইন্ড করে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন রিপন। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে এগুতে থাকেন ইয়াশ দুল ও সিদ্ধার্থ যাদব। রিপন চেষ্টা চালিয়েছেন সর্বোচ্চ। যাদব, রাজ বাওয়াকেও ফিরি ৪ উইকেট তিনি। তবে তাতে কেবল আক্ষেপই বেড়েছে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ডুবে মরে হতাশায়। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় যুবারা। রবি কুমারের ফুলার লেন্থের বল খেলতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন মাহফিজুল ইসলাম। ৬ষ্ঠ ওভারে আবার আঘাত হানেন রবি। এবার তার শিকার আরেক ওপেনার ইফতেখার হোসেন। স্কয়ার কাট করতে গিয়ে ১৭ বলে ১ রান করে পয়েন্ট ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইফতেখার। প্রান্তিক নওরোজ নাবিল হতাশ করেন আরও একবার। রবির বলেই স্লিপে সহজ ক্যাচে পরিণত হন তিনি। মাত্র ১৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
আইচ মোল্লাহর সঙ্গে জুটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিলেন আরিফুল ইসলাম। জুটিতে ২৩ রান যোগ করার পর বিদায় আরিফুলের। বাঁহাতি স্পিনার ভিকি ওয়াসওয়ালের বলে কিপারের হাতে জমা পড়েন তিনি। খানিক পরই কিপার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ ফাহিমের আত্মাহুতি। ক্রিজে এসেই ভিকির বলে রিভার্স সুইপ গিয়ে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন তিনি। ৩৭ রানে পড়ে যায় ৫ উইকেট।
আইচের সঙ্গে মিলে অধিনায়ক রাকিবুল হাসান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। দলের ৫০ রানে অফ স্পিনার কুশাল থাম্বে এসে থামান তাকে। খানিক পর থিতু হওয়া আইচ রান আউটে কাটা পড়লে ৫৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে যায় যুবার।
এরপর আশিকুর রহমানকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন মেহরুব। ৮ম উইকেটে দুজনে মিলে যোগ করেন ৫০ রান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩০ রান করে রাঘুভানসির বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন তিনি। তার আউটের পর আর বেশিক্ষণ টেকেনি যুবাদের ইনিংস।
এত অল্প পুঁজি নিয়ে লড়াইয়ের বাস্তবতা ছিল না, হয়ওনি। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এবার তাই থামতে হয়েছে শেষ চারের আগে। মূল আসর থেকে ছিটকে পড়ায় বাংলাদেশের যুবাদের খেলতে হবে স্থান নির্ধারনী ম্যাচ। আর আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে ভারত নামবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৩৭.১ ওভারে ১১১ ( মাহফিজুল ২, ইফতেখার ১, প্রান্তিক ৭, আইচ ১৭, ফাহিম ০, আশিকুর ১৬, সাকিব ২, রিপন ২* ; হাঙ্কারকার ১/১৯, রবু ২/১৪, রাজ ০/১৬, ভিকি ২/২৫, কুশাল ১/২৭, রাঘুভানসি ১/৪)
ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৩০.৫ ওভারে ১১৭/৫ (রাঘুভানসি ৪৪, হারনুর ০, রাশিদ ২৬, দুল ২০*, যাদব ৬, রাজ ০, কুশাল ১১* ; আশিকুর ০/২২, তানজিম ১/৩৪ , রিপন ৪/৩১, রাকিবুল ০/৩০)
ফল: ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৫ উইকেটে জয়ী।