আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানি পশুর হাট যাতে করোনা সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হতে না পারে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি শনিবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের কার্যালয়ে মতবিনিময়কালে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই মুসলিম সম্প্রদায়কে এবারের ঈদুল আযহা পালন করতে হবে। প্রতিদিনই এ ভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এবারের কোরবানি পালনে আমাদেরকে অবশ্যই সংযমী হতে হবে। কোরবানির নামে সামাজিক চাকচিক্য ও বিত্তবৈভবের প্রতিযোগিতা পরিহার করতে হবে। জীবন রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সংক্রমণ রোধে কিছু প্রস্তাবনা চসিক মেয়রের কাছে উপস্থাপন করেন তিনি। প্রস্তাবনাগুলো হলো : প্রতিটি পশুর হাটের প্রবেশমুখে তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র এবং জীবানুমুক্ত সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাস্ক ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতার হাটে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করতে হবে। সর্দি, কাশি, জ্বর নিয়ে কেউ হাটে প্রবেশ করতে পারবে না। শিশু ও বৃদ্ধদের হাটে অনুৎসাহিত করতে হবে। হাটের সঙ্গে যুক্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রতিটি পশুর হাটে আলাদা প্রবেশপথ ও বাহিরপথ নিশ্চিত করতে হবে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হাট চালু থাকবে। একবারে যাতে ২০০ জনের অতিরিক্ত ক্রেতা হাটে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে দ্রুত পশুর বর্জ্য পরিষ্কার করতে হবে। জলাবদ্ধতা তৈরি না করে নিরাপদ বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। হাটের আশে পাশে কোন প্রকার হোটেল, রেস্তোরাঁ কিংবা খাবারের দোকান থাকতে পারবে না। একদিনের মধ্যেই কোরবানির সকল প্রকার বর্জ্য অপসারণ করতে হবে। এছাড়া পোর্ট কানেকটিং সড়কটির নয়াবাজার সাগরিকা অংশে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রীসাধারণ দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগে আছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ওই অংশটির কাজ সমাপ্তসহ নগরীর ভাঙ্গা রাস্তাঘাটসমূহ অতি দ্রুত সংস্কার করার অনুরোধ জানান তিনি। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পোর্ট কানেকটিং সড়কটি চলাচল উপযোগী করা না হলে প্রয়োজনে ঠিকাদারের বাসাসহ সিটি করপোরেশনও ঘেরাও করা হবে বলে জানান তিনি। তাছাড়া চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা যারা সেমিপাকা কিংবা আধাপাকা বাড়িতে অল্প কয়টি রুম নিয়ে বসবাস করেন তাদের উপর কর আরোপ না করার অনুরোধ জানান তিনি। দেখা যাচ্ছে যে তারা এক রুমে বসবাস করছেন অন্যদিকে আরেকটি রুম ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তাই তাদের উপর কর আরোপ না করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ যারা চট্টগ্রামের ভৌগলিক অবস্থানকে ব্যবহার করে ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের উপর করের পরিধি বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি বর্ষায় নগরীর বিভিন্ন অংশ জলাবদ্ধতায় রূপান্তরিত হয়েছে। এর ফলে নগরবাসীর জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে জলজট হয়ে ভোগান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরীর খালগুলোর ময়লা আবর্জনা এবং জোয়ারের পানি এক হয়ে উপচে পড়ে এ জলজট সৃষ্টি হচ্ছে। তাই খালের ময়লা সঠিক সময়ে অপসারণ এবং আভ্যন্তরীন নালাগুলো পরিষ্কার করে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ পুনরুদ্ধার করতে পারলেই জলজট থেকে মুক্তি পাবেন নগরবাসী। জলজট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণের জন্যও মেয়রের নিকট আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, নাগরিক সমাজের কাজ হলো সমাজের বিভিন্ন ত্রুটি, অসঙ্গতি ও অনিয়ম খুঁজে বের করে সমাধানের লক্ষ্যে স্ব-স্ব দপ্তরে উপস্থাপন করা এবং নাগরিক উদ্যোগ সেই কাজটিই করেছে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত স্বাস্থ্য বিধি মেনেই পশুর হাট পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে ইজারাদারদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আমি নিজেও পশুর হাটে গিয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করেছি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সিটি করপোরেশনের ধারাবাহিক কর্মকা-ের বিবরণও নেতৃবৃন্দের কাছে উপস্থাপন করেন চসিক মেয়র।
কোরবানি পশুর হাট যাতে কোনভাবেই করোনা সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত না হয় সেদিকে করপোরেশনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। এছাড়া পোর্ট কানেকটিং সড়কের নয়াবাজার সাগরিকা অংশের কাজও চলমান উল্লেখ করে সভা চলাকালীন ওই সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের সাথেও চসিক মেয়র এবং খোরশেদ আলম সুজন ফোনে আলাপ করে দ্রুততার সাথে রাস্তাটি চলাচল উপযোগী করার আহ্বান জানান। নগরীর অন্যান্য ভাঙ্গা রাস্তাঘাটসমূহও দ্রুত সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, করপোরেশনের আয় সীমিত। সীমিত আয়ের মধ্যেও করপোরেশন নগরবাসীর উপর নতুন করে কোন প্রকার কর আরোপ করেনি। কর আদায়ের ক্ষেত্রে নাগরিক উদ্যোগ উত্থাপিত প্রস্তাবনার সাথেও সহমত পোষন করেন তিনি। তাছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশাল অংকের বাজেটের কাজ চলমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, বহদ্দারহাট থেকে ২ নম্বর গেট পর্যন্ত জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে সেহেতু ওই সব এলাকায় সিটি করপোরেশনের কাজ করার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া নগরীর আরো বিভিন্ন এলাকায় জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলমান। এর বাহিরেও সিটি করপোরেশন নিয়মিত ময়লা আবর্জনা অপসারণের কাজ করছে। তারপরও নগরীর কিছু এলাকায় জোয়ারের কারণে জলজট হচ্ছে। তিনি ময়লা আবর্জনা অপসারণ সংক্রান্ত কোন তথ্য থাকলে তা সিটি করপোরেশনকে জানানোর জন্য নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান। কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে একদিনে মধ্যেই পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হবে বলে নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন তিনি। নগরবাসীর যে কোন ভোগান্তিতে চসিক এর হটলাইন নম্বর ১৬১০৪ এ যোগাযোগ করার জন্যও তিনি আহ্বান জানান।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর মো. হোসেন হীরন, শৈবাল দাশ সুমন, আব্দুর রহমান মিয়া, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন, মোরশেদ আলম, সমীর মহাজন লিটন এবং স্বরূপ দত্ত রাজু প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি
মহানগর