নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী >>
বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে মাংস রান্না স্বাদ না হওয়ায় আইরিন আক্তার (২১) নামের এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া বিয়ের ৪ বছরের মধ্যে এক লাখ টাকা যৌতুকের জন্য এই গৃহবধূকে নানাভাবে পিটিয়ে এবং ঘর থেকে বের করে দিয়ে অনন্ত ৫ বার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোরও নজির রয়েছে স্বামী হারুনুর রশিদ ও ভাসুর মো. সিরুর বিরুদ্ধে। এই নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা পুলিশ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে কয়েকদফা সালিসী বৈঠকেরও ঘটনা ঘটেছে।
বাঁশখালী থানা পুলিশ গত শনিবার (২৪ জুলাই) রাতে আনোয়ারা উপজেলা হাসপাতালে স্বামীর ফেলে যাওয়া গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। ঘটনার পর পর স্বামী ও ভাসুর পলাতক রয়েছেন। হত্যার পর পর গৃহবধূ আইরিনের শ্বশুর পরিবারের লোকজন গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আইরিন আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করছে। আইরিনের ৩ বছর বয়স্ক ও ৫ মাস বয়স্ক দুই ছেলে রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে, পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মৃত আহমদ হোসেনের ছেলে অটোরিকশাচালক হারুনুর রশিদের সাথে দক্ষিণ সাধনপুর গ্রামের আবু ছালেকের মেয়ে ৭ম শ্রেণির পড়ুয়া আইরিন আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে আইরিনের শ্বশুর পরিবার অটোরিকশা কেনার কথা বলে আইরিনের বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে বসে। এই টাকা না পেয়ে স্বামী হারুনুর রশিদ প্রায়শ আইরিনকে মারধর করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিত। এই নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা পুলিশ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে কয়েকদফা সালিসী বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে প্রতিবার নিষ্পত্তি হলে আইরিন স্বামীর ঘরে ফিরতো।
সর্বশেষ গত ২১ জুলাই স্বামী হারুনুর রশিদ স্থানীয় এক প্রতিবেশির দেয়া কোরবানির গরুর মাংস এনে আইরিনকে রান্না করতে দেন। আইরিন ওই মাংস রান্না করলে তা খেয়ে আইরিনের স্বামী ও স্বামীর স্বজনরা মাংসের স্বাদ ভালো পাননি। মাংসের স্বাদ তেতো হওয়ার ঘটনা প্রতিবেশিদেরও ডেকে দেখানো হয়। এরপর স্বামী হারুনুর রশিদ মাংস কেন স্বাদ হয়নি অভিযোগ তুলে আইরিনকে কয়েকদফা পিটিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম করে। এর পর থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত আইরিন ঘরের কাজকর্ম করলেও ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে অভুক্ত থাকেন। গত ২৪ জুলাই সকাল ৯টায় আইরিনকে আবারো পিটালে আইরিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরিবারের লোকজন গোপনে আইরিনকে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার আইরিনকে মৃত অবস্থায় পান। এর পর হাসপাতালে লাশ ফেলে কৌশলে সবাই পালিয়ে যায়।
আনোয়ারা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেন, গৃহবধূ আইরিনকে তার স্বজনরা মৃত অবস্থায় হাসপাতালে এনেছিল।’
স্বামী হারুনুর রশিদের মা এবং আইরিন আক্তারের শাশুড়ি নুর বানু বলেন,‘মাংসের রান্না স্বাদ না হওয়ায় আইরিনকে আমার ছেলে পিটিয়েছে ঠিক কিন্তু হত্যা করেনি। আমার ছেলে বলেছে ওড়না পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। তবে কিভাবে আইরিন মারা গেছে, কোথায় ওড়না পেঁচানো হয়েছে আমি দেখিনি। কারণ ওই সময় আমি ঘরে ছিলাম না।’
দক্ষিণ সাধনপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন,‘আইরিনের যৌতুকলোভী স্বামী হারুনুর রশিদের অত্যাচারে দফায় দফায় সালিসী বৈঠকে স্বামী হারুনুর রশিদের দোষ প্রমাণিত হত। মূলত যৌতুক না পেয়েই মাংস রান্নার অজুহাতে আইরিনকে হত্যা করেছে।’
আইরিনের বাবা আবু ছালেহ এবং মা শামশুন্নাহার বলেন, ‘আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তারই স্বামী হারুনুর রশিদ। হত্যার পর তারা আমার মেয়ের লাশ গায়েব করার চেষ্টা করেছিল। তাই বাঁশখালী থেকে আমার মেয়ের লাশ আনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। আমার মেয়ের হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
বাঁশখালীর রামদাশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মিনহাজ মাহমুদ বলেন, ‘আইরিনের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে আইরিনের লাশ বাপের বাড়িতে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইরিনের বাবা-মা। বিষয়টি তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’