কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ করা যাবে না

মতবিনিময় সভায় আনিছুর

নিজস্ব প্রতিবেদক »

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনশৃংখলা বাহিনী ও নির্বাচনী রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে বসেছি। আমাদের নির্দেশনায় বলেছি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া যাবে না। কোনো রকমের পক্ষপাতমূলক আচরণ করা যাবে না। কোনো ধরনের শিথিলতা দেখানো যাবে না।’

তিনি গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জেলার রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে এ মন্তব্য করেন।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এখানে যে বা যারা দায়িত্ব পালন করবেন যথাযথভাবে করতে হবে। যদি কারো কোনো দায়িত্ব পালনে পক্ষপাতমূলক আচরণ লক্ষ্য করা যায় অর্থাৎ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে সে ক্ষেত্রে যে দায়ী থাকবেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৪৪টি নিবন্ধিত দল আছে। নির্বাচন করা বা না করার এখতিয়ার তাদের আছে। নির্বাচন বানচাল করা বা অন্যকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার অধিকার কাউকে আইন দেয়নি। কেউ যদি এরকম আচরণ করে তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার দলীয় বিষয়। কিন্তু আরেকজনকে তো বাধা দেওয়া যাবে না। আমরা এখনও কারও কাছ থেকে আবেদন-নিবেদন কিছু পাইনি। কেউ যদি নির্বাচনে আসে, নির্বাচনী সময় নিয়ে তাদের কোন কথাবার্তা থাকে তখন আমাদের জানালে আমরা বিবেচনা করব। বিবেচনা করার সময় আমাদের আছে।’

বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আমন্ত্রণ জানানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি না আসে আমি কি জোর করে আনতে পারব? আমরা তাদের চারবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এ মাসের চার তারিখেও নিবন্ধিত সকল পলিটিক্যাল দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। ২৬টি দল এসেছিল, ১৮টি আসেনি। না আসলে তো জোর করে আনার সুযোগ নেই।‘

নির্বাচন মনিটরিংয়ে কেøাজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হবে কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সব ভোট কেন্দ্রে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো সম্ভব নয়। এরকম হলে তিন লাখের মতো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগবে। যা মনিটরিং করা খুবই কঠিন কাজ।’

নির্বাচনে চট্টগ্রামে কি পরিমাণ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা একবারে বলতে পারব না। চাহিদা অনুযায়ী সেখানে দেওয়া হবে। এটার জন্য সরকারি একটি পরিপত্র দেওয়া হয়। এটা তারা ওয়ার্ক আউট করেছে। প্রত্যেক বাহিনী তাদের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। সাধারণত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি হয়। তারা একটি খসড়া করে আমাদের কাছে পাঠায়। যদি ওখানে কোথাও বাড়ানো বা কমানোর বিষয় হয় সেটা আমরা করে দিই। তারপরেও আমাদের বিভিন্ন বাহিনীর সাইকেলিং ফোর্স, টহল ফোর্সগুলি থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে কমানো ও বাড়ানোর সুযোগ আছে।’

আসন্ন নির্বাচনে সামরিক বাহিনীর মোতায়েনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের সকল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামরিক বাহিনী মোতায়েন ছিল। এবারও একই ধারায় সামরিক বাহিনী মোতায়েনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যেই আট শতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামছে। যারা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তারা এবার ফুলটাইম কাজ করবেন। ডিসেম্বরে মাসে আদালত বন্ধ থাকে। পুরো সময়টিতে তারা কাজ করবেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাতে তারা কাজ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিফ জাস্টিসের কাছে আমরা গিয়েছিলাম। তার সম্মতি পাওয়া গেছে।’

ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোটারকে আনা বা উপস্থিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন অথবা ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর না। যারা নির্বাচন করবেন সে প্রার্থী, দল, তার সমর্থক ও নেতাকর্মীদের এ কাজ করতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইউনুছ আলী, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এনামুল হক, বিজিবির রিজিওনাল কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাজিদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।