কোনো কারণে নির্বাচন যথাসময়ে নাও হতে পারে, তবে জুলাই সনদ হতে হবে : তাহের

সুপ্রভাত ডেস্ক »

জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ ও সংস্কার প্রশ্নে আলাদা করে গণভোট দিতে হবে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, আমরা আশা করছি যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু কোনো কারণে যদি যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন না হয়?

তিনি বলেন, গণভোট হচ্ছে জুলাই সনদ ও সংস্কারের ব্যাপারে জনমত। আর জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে দেশীয় রাষ্ট্র ক্ষমতার নির্ণয়ক। দুটো নির্বাচনের চরিত্রই ভিন্ন। কিন্তু কোনো কারণে তো সঠিক সময়ে নির্বাচন নাও হতে পারে! তখনও তো জুলাই সনদ পাশ করতে হবে। জুলাই সনদ তো সংস্কার। সুতরাং দুটোকে একসঙ্গে জুড়ে দেওয়ার কোনোভাবে সঠিক মনে করি না। বরং এটা জুলাই সনদকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে মগবাজারস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কমনওয়েলথের ‘ইলেকটোরাল সাপোর্ট’ শাখা উপদেষ্টা এবং ‘প্রি-ইলেকশন অ্যাসেসমেন্ট’ প্রধান লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুজের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফররত একটি প্রতিনিধি দল এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়।

বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

এসময় উপস্থিত ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন ও জনাব মোবারক হোসাইন।

কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন ড. দিনুষা পণ্ডিতরত্ন, মিসেস ন্যান্সি কানিয়াগো, মি সার্থক রায়, মিসেস ম্যাডোনা লিঞ্চ।

বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন, গণতন্ত্রকে টেকসইকরণ, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ শক্তিশালীকরণ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অগ্রগতির বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও আইনশঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করা হয়। আগামী নির্বাচনে কমনওয়েলথ এর পর্যবেক্ষক দল আসবে বলেও তারা জানিয়েছেন।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, জুলাই সনদ জাতির জন্য পরিবর্তনের দলিল, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরকম পরিবর্তনের সূচনা, সংস্কার আগে কখনো হয়নি। সেটা অনুধাবন করে অনতিবিলম্বে তারিখ ঘোষণা করে দিলে গণভোটটা আলাদা করে হবে।

তিনি বলেন, গণভোটের সঙ্গে কিছু সিদ্ধান্ত জড়িত রয়েছে, যেমন আপার হাউজের ইলেকশন। আপার হাউজের ইলেকশন যদি হইতে হয় সেটা তো মানুষকে আগেই জানতে হবে। যদি গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হয় তাহলে মানুষ তো জানতেই পারবে না, আপার হাউজ পাশ হচ্ছে নাকি হচ্ছে না। সুতরাং কোনো কিছু না জেনেই জনগণকে ভোট দিতে হবে। পার্লামেন্ট নির্বাচনে যে হারে ভোট হবে সে অনুযায়ী আপার হাউজ গঠিত হবে। ভোটের পর জন্ম হবে আপার হাউজের, কিন্তু কোনো কিছু না জেনেই আপনি নাম রাখতেছেন আগেই ছেলে নাকি মেয়ে। এটা তো উদ্ভট ব্যাপার। সে জন্য আমরা বলছি গণভোট দিতে হবে আগেই।

প্রশ্ন এখন দুটো। এক- সময় আছে কিনা? হ্যাঁ আছে। বাংলাদেশে দুটো ভোট হয়েছে ১৭ দিন ও ২১ দিনের ব্যবধানে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যদি গণভোটের তারিখ নির্ধারণ হয়ে যায় তাহলে নভেম্বরের শেষে নির্বাচনটা হয়ে যেতে পারে৷ আর এই নির্বাচনের জন্য তো অন্য নির্বাচনের মত এত সময় লাগবে না, প্রার্থী বাচাই, প্রার্থিতা ঘোষণায, এসব লাগবে না।

দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন হচ্ছে : ভোটার আসবে কিনা! আমরাই তো ভোটার আনবো। ভোটারের ঢেউ নামবে। আমরা যারা হ্যা-র পক্ষে তারাই তো ভোটার আনবো। ভোটারের ক্রাইসিস হবে না।

তৃতীয়ত, প্রশ্ন টাকা খরচ হবে। দেশের স্বার্থের জন্য তো টাকা খরচা করতেই হবে। জুলাই সনদ এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে, কিছু ফান্ড খরচ করে হলেও গণভোটটা দিতে হবে। তাতে করে ভবিষ্যতের রাজনীতির দিগন্ত উন্মোচিত হবে। আর এই গণভোটের জন্য যে খুব বেশি খরচ হবে তাও না। দুটো নির্বাচনের জন্যই তো ব্যালট বাক্স কেনা যাবে।

তাহের বলেন, অল্প খরচে অল্প সময়ে এই নির্বাচনটা করা সম্ভব। এজন্য জরুরি আদেশের নামে কালবিলম্ব না করার কোনো মানে হয় না, অতি জরুরি জুলাই আদেশ দিয়ে নভেম্বরেই গণভোটটা শেষ করে ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন প্রস্তুতি সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সময় ক্ষেপণের টেকনিক করে যদি অন্য কিছুর দিকে যাওয়ার চিন্তা হয় তাহলে আমাদের সব নির্বাচনেই এটা চাপ তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।

কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দলের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, প্রত্যেকটা নির্বাচন কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কথা আমরা বলেছি নির্বাচন কমিশনকে। শুধুমাত্র যেখানে ভোট দেবে সেখানকার প্রাইভেসি রক্ষা করতে বলেছি। কিন্তু অনেকে এটার বিরোধিতা করছেন। কেন বিরোধিতা করছেন তা আমরা জানি না। সিসি ক্যামরা স্থাপন করলে হাঙ্গামা হচ্ছে কিনা তা তো বুঝা যাওয়ার কথা।

আমরা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন চাই। ভোটকেন্দ্রে আর্মি, র‍্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসারসহ যতগুলো এনফোর্সমেন্ট আছে সবগুলো ডেপ্লয়মেন্ট চাই। আগে আর্মি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকতো। আমরা এবার দাবি করেছি, আর্মি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেও থাকবে, কেন্দ্রেও থাকবে। আমাদের লক্ষ্য সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন, এ জন্য যত টাইট করা যায় এর পক্ষে জামায়াতে ইসলামী। আমাদের নিয়ত সহি। কোনো খাদ নাই। আমাদের বক্তব্যে কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দল একমত হয়েছেন।

তারা বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে যদি কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষক চাই কিনা। আমরা বলেছি শুধু কমনওয়েলথ না বিদেশি সব অবজার্ভারকে আমরা ওয়েলকাম জানাই।

এখন প্রশ্ন- গণভোট কখন হবে? আর জুলাই আদেশ দেবে কে? গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন যদি একই দিনে হয় তাহলে আপনাদের অবস্থান কি হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তাহের বলেন, গণভোট আর জাতি নির্বাচন একই দিনে হলে গণভোটের কোনো গুরুত্ব থাকবে না। জুলাই সনদ সংস্কার গণভোটের গুরুত্ব মার খেয়ে যাবে। কারণ জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রত্যেকটি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থীদের জেতানোর জন্য মরিয়া, পেরেশানিতে থাকবেন, গণভোট দেওয়ার জন্য মানুষকে আলাদা করে বলাটা হবে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর এ নায়েবে আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামী নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। আমরা যদি ক্ষমতায় যেতে পারি অবশ্যই বাংলাদেশ নতুন বাংলাদেশ হবে। বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। আমরা ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতিকে আগে শেষ করার টার্গেট করবো। বাংলাদেশের আর একটা সমস্যা আছে গুড গভর্নেন্স এর অভাব। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে গুড গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা করবে।