ড. আনোয়ারা আলম »
কেমন আছি আমরা? পরিবার ও সমাজ কোন পথে! প্রতিদিনের পত্র পত্রিকার নানা নেতিবাচক সংবাদে গভীর হতাশায় মন আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বাড়ছে পারিবারিক ভাঙন, পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা গ্রাস করছে মানবিক মূল্যবোধকে। একের পর একেক ধরনের সামাজিক বিশৃঙ্খলা। মানুষে মানুষে আচরণে এক ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা। একদিকে চোখের সামনে একজন আরেকজনকে কুপিয়ে মারছে আমরা একসাথে ঝাপিয়ে না পড়ে বরং অনেকে সেলফি তুলছি। অন্যদিকে নিষ্ঠুর ও খুনি আসামিকে ছিনতাই করে মেরে ফেলছি, দুই ঘটনার নেপথ্যে কাজ করছে আইনের প্রতি আস্থাহীনতা। চরম এক ভারসাম্যহীন সমাজের দিকে আমরা। নৈরাজ্য হচ্ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলার চরম রূপ। রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যখন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা তখন সমাজে নৈরাজ্য দেখা দেয়। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে ‘সামাজিক সমস্যা সমাজ জীবনের এক অস্বাভাবিক অবস্থা যা সমাজের উল্লেখযোগ্য অংশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে আর সমাধানে যৌথ সমাজকর্মের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।’
সমাজে মূল্যবোধগুলো দূর্বল হয়ে পড়লে সমাজ কাঠামোতে যে শিথিলতা আসে এর প্রভাবে সমাজে যে অনাকাক্সিক্ষত ও অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয় যার নেতিবাচক প্রভাব অধিকাংশ মানুষের ওপর পড়ে, সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে একটা আন্তঃসম্পর্ক বিরাজমান। কোন সমস্যা একক বা বিচ্ছিন্নভাবে বিরাজ করেনা বরং একটি সমস্যা অন্য আর একটা সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
এ ক্ষেত্রে প্রথম দায় পরিবারের। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, মূল্যবোধ ও প্রত্যাশিত সামাজিক সংস্কৃতির পাঠ পরিবার থেকে অর্জিত হয় এবং পরিবার হচ্ছে সুস্থ সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি। এখানে এক বিশাল শূন্যতা।
পরিবারের পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানেও একটা মূল্যবোধের ধস নেমেছে। শিক্ষকদের মধ্যে পারস্পরিক দলাদলি, দ্বন্দ্ব বা ইগো সমস্যা বা নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা ও উচ্ছৃঙ্খল। একই সাথে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা কোন্দল। এই দুই প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে পারস্পরিক সম্মান ও মিলনের সংস্কৃতি এখন তেমন নেই।
সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারণে বাড়ছে মাদকাসক্তি,কিশোর অপরাধ, অপহরণ, আত্মহত্যা, নারী নির্যাতন, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্ত্রাস বা চাঁদাবাজি বা হত্যা। আর দুর্নীতিতো এখন লাগামহীন। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।
এই নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণ কিভাবে সম্ভব! অতীতের পরাধীন দেশে যে কোন অন্যায় বা অনাচার বা শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তরুণসমাজ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতারা।
মনে রাখতে হবে আমাদের একটা গভীর ঐতিহ্যের ইতিহাস আছে, মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য লড়েছি এবং একবুক রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করে আমরা উন্নয়নের পথে গেলেও উন্নতি কতোটা তা ভাবার বিষয়।
সামাজিক বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হয় সুশীল সমাজকে। আমরা সেখানে নিরব। শুধু কলম ধরাতেই সীমাবদ্ধ। অথচ দরকার সামাজিক আন্দোলন। নেতৃত্বে থাকবেন বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায়, দেশ প্রেমিক রাজনৈতিক নেতা এবং তারুণ্য শক্তি। কিন্তু সবক্ষেত্রেই একটা শূন্যতা। পরিবর্তে আছে লেজুড়বৃত্তি, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আর ক্ষমতার অপব্যবহার। রাজনীতি মানে জনগণের প্রতি ভালোবাসা এবং দায়বদ্ধতা। পরিবর্তে একই দলে মারামারি, কোন্দল ও ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি। সমাজের জন্য এটি এক অশনিসংকেত। সরকারের একার পক্ষে সবকিছুর সমাধান সম্ভব নয়। এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। কিন্তু প্রশ্নটা জাগে ‘কে ধরিবে হাল’।