সুপ্রভাত ডেস্ক »
দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবচেয়ে বড় স্বৈরাচারী ও বিধ্বংসী প্রতিষ্ঠান বলে মন্তব্য করেছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বৈরাচারী আচরণ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ধ্বংস করার জন্য দায়ী। সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নতুন করে তৈরি করতে হবে।
রোববার (১৭ নভেম্বর) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ সংস্কার: অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা’ শীর্ষক একটি সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। খবর টিবিএস।
সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত অধ্যাপক লুৎফে সিদ্দিকী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আর সংলাপটি সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি জাভেদ আখতার, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি ফজলী শামীম এহসান, ডিসিসিআই’র সভাপতি আশরাফ আহমেদ ও বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল উপস্থিত ছিলেন। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি বলেন, সবাই সংস্কার সংস্কার করছে। কিন্তু কে এটা করবে? অন্তর্বর্তী সরকার? এটা চলমান একটি প্রসেস, স্বল্প সময়ে একটি রাষ্ট্রের পুরো সংস্কার হতে পারে না। আমি ৮০—র দশক থেকে দেখে আসছি; আজকের এই আলোচিত সমস্যাগুলো সমাধান হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বৈরাচারী আচরণ বাণিজ্য ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একটা দুর্বৃত্তায়ন রাজনীতি থেকে আমরা এটা আশা করতে পারি। এটা শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। সবকিছুর আগে রাজনৈতিক সংস্কার করতে হবে। না হলে চল্লিশ বছরে যা সম্ভব হয়নি ভবিষ্যতেও হবে না।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী ২ বছরের জন্য সামাজিক ঝুঁকি বিবেচনায় ৩টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে রয়েছে— বেকারত্ব, জ্বালানি ঘাটতি, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিকস রোগের প্রাদুর্ভাব অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা এবং সামজিক অবক্ষয়। বাংলাদেশে ডুয়িং ব্যবসা করার জন্য ১৭টি সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে— দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, নীতির অস্থিতিশীলতা, দুর্বল শ্রমশক্তি, শিক্ষিত শ্রমশক্তির অপ্রতুলতা, উচ্চ কর হার, ট্যাক্স প্রবিধানের জটিলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরাধ এবং চুরি, উদ্ভাবনের জন্য অপর্যাপ্ত ক্ষমতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঝুঁকিপূর্ণ জনস্বাস্থ্য এবং শ্রমনীতির সীমাবদ্ধতা।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সিস্টেমের পরিবর্তন করতে হবে। বাইরে থেকে আসা অন্তত ১৭টি সিস্টেম পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এখন কিভাবে মেকানিক্যাল সিস্টেম পরিবর্তন করতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক এবং জনগণের ঐক্যমতে শক্তি দরকার। না হলে জনসাধারণের কাছে ভুল মেসেজ যাবে। আমরা পুরো সরকার ব্যবস্থার সংস্কৃতিক পরিবর্তনের কথা বলছি।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বিগত সরকারের সময় নেওয়া ১০০টি অর্থনৈতিক জোন কোনভাবেই একসাথে রান করা সম্ভব নয়। এখানে যে ধরনের অবকাঠামো গত উন্নয়ন করা দরকার সেটা তো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই এটা কমিয়ে আনবো। কমিয়ে ১০টি বা তারও কম নিয়ে কাজ করা যায় কিনা; সে বিষয়ে সরকার চিন্তা ভাবনা করছে।
এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে দেশের বিশ্বাসযোগ্য থাকতে হবে। এনবিআর বলতেছে ট্যাক্স ২৫ শতাংশ কিন্তু উৎপাদনকরীদের অনেক ক্ষেত্রেই ৪৫ শতাংশের বেশি টেক্স দিতে হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা যেন মিডেল ইনকাম ট্রাপে পড়ে না ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা লক্ষ্য রেখে রিফর্ম করতে হবে। এটার জন্য কোরিয়া মডেল ফলো করা যেতে পারে।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতি থেকেই মূল সমস্যা শুরু হয়। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে ঘুষের ওপর ঘুষ চলে। বিশেষ করে— করের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। এনবিআরকে ভিন্ন ভিন্ন পলিসি দিয়ে দুর্নীতি কমানো সম্ভব। এ বিষয়ে আরও একটি প্রোগ্রাম করা যেতে পারে। দুর্নীতি কমানোর জন্য সৎ মানুষ থাকলেই হবে না। সততার পাশাপাশি ইতিবাচক মানসিকতা জরুরি।
তাঁরা আরও বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, দুর্নীতি, প্রবৃদ্ধির হিসাবে গরমিলের কারণে অর্থনীতিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনীতির বড় অনিশ্চয়তা এখন উৎপাদন খাতে। নানা রকম উদ্যোগের পরও সবচেয়ে বড় রপ্তানি শিল্প পোশাক খাতে উৎপাদন ব্যবস্থা এখনো ভঙ্গুর রয়ে গেছে। জুলাই মাস থেকে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের পোশাকশিল্প এলাকা শ্রমিক বিক্ষোভ দেখছে। সম্প্রতি পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও তা টেকসই হয়েছে কি না, সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
প্যানেল সংলাপে আরও উঠে আসে, আরএমজি সেক্টরে অস্থিতিশীল অবস্থার সুযোগ নিয়ে ভারত বাজারে তাদের উৎপাদন বাড়াতে এবং রপ্তানি করতে চাচ্ছে। যা বাংলাদেশের গার্মেন্টকে ক্ষতির সম্মুখীন করবে। এ সকল সমস্যা মোকাবেলায় অবশ্যই বর্তমান সরকারকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে আগাতে হবে। কেননা বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে চেয়ে আছে, যদি সেটা বিলম্বিত হয় তবে আমাদের বিনিয়োগগুলো তৃতীয় কোন দেশে চলে যাবে।