কৃষিতে ড্রোনের ব্যবহার একটি অপার সম্ভাবনা

পত্রিকা মারফত জানা গেল, কৃষিকাজেও প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সনাতনী পদ্ধতির কাস্তে দিয়ে ধান বা শস্য কাটার বদলে এখন হারভেস্টারের সাহায্যে একসঙ্গে কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই-তিনটি কাজই করা যাচ্ছে। ড্রোন দিয়ে কীটনাশক ও সার প্রয়োগের অত্যাধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতিও এসে গেছে।

কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকেরা জানান, ড্রোনের সাহায্যে করলে জমিতে পরিমিত মাত্রায় সার-কীটনাশক ছিটানো যায়। এতে কৃষকের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এক বিঘা জমিতে কীটনাশক ছিটাতে একজন মানুষের যেখানে দুই ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে ড্রোনের, লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট, খরচও কম পড়ে।

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। সম্প্রতি দেশের কৃষিখাতে সার ও কীটনাশক ছিটানোর কাজে ড্রোনের ব্যবহার শুরু হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। সনাতন কৃষি থেকে বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে উত্তরণের ক্ষেত্রে এটি এক বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রথাগত পদ্ধতিতে জমিতে সার বা কীটনাশক ছিটানো কেবল শ্রমসাধ্যই নয়, বরং এটি কৃষকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সরাসরি রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসায় দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগের ঝুঁকি থাকে। ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব।

এছাড়া, ড্রোনের মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সারা জমিতে সমপরিমাণ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা যায়। এতে অপচয় কম হয় এবং পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হয়। ড্রোনের সেন্সর ব্যবহার করে ফসলের রোগাক্রান্ত অংশ চিহ্নিত করে কেবল সেই নির্দিষ্ট স্থানেই কীটনাশক ছিটানো সম্ভব, যা সনাতন পদ্ধতিতে অসম্ভব ছিল।

তবে এই প্রযুক্তির প্রসারে কিছু উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ কৃষকই প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র খামারের মালিক। ড্রোনের উচ্চমূল্য এবং এটি পরিচালনার কারিগরি দক্ষতা সাধারণ কৃষকের আয়ত্তের বাইরে। এছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় ড্রোন উড্ডয়নের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং নীতিমালা মানার বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ।

তবে ড্রোনের সুফল প্রতিটি কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে সরকারকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ড্রোনের ব্যবহার কেবল সময় ও শ্রম সাশ্রয় করবে না, বরং ফলন বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।

আর বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ‘উড়ন্ত রোবট’ বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে গেম-চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে। আমরা আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে প্রতিটি কৃষি মাঠেই ড্রোনের ব্যবহার দেখা যাবে এবং আমাদের কৃষকরা হবে আরও সমৃদ্ধ ও আধুনিক।