আরেকটি দুর্ভাবনার খবর দিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। গতকাল প্রকাশিত তাদের একটি জরিপে বলা হয়েছে, আধুনিক উন্নয়ন ও নগরায়ণের ফলে দেশে দিন দিন কমছে কৃষিজ ও বনজ ভূমি। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দেশে কৃষিজ ভূমি কমেছে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৪৭১ বর্গকিলোমিটার।
অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নগরায়ণের ফলে দেশে দিন দিন কমছে কৃষিজ ও বনজ ভূমি। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দেশে কৃষিজ ভূমি কমেছে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৪৭১ বর্গকিলোমিটার। এ সময়ে বনভূমি কমেছে এক হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি। তবে ৩৬৭ বর্গকিলোমিটার কৃত্রিমভাবে তৈরি সামাজিক বনায়ন বেড়েছে।
পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ পরিসংখ্যান শক্তিশালীকরণ (ইসিডিএস) প্রকল্পের আওতায় এ জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে ভূমি ব্যবহারের অবস্থায় কৃষিজমির ব্যবহার কমেছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৫ সালে কৃষিজ ভূমির ব্যবহার ছিল ৫০ দশমিক ৪১ শতাংশ, ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪৯ দশমিক ৪১ শতাংশে।
এ সময়ে বনভূমি কমেছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০১৫ সালে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বনভূমি ছিল। যার আয়তন প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশে। এছাড়া ১ দশমিক ১ শতাংশ জমির ব্যবহার নেই। ৬৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ অভ্যন্তরীণ জলরাশির ব্যবহার হচ্ছে না। তবে এ সময়ে বেড়েছে নির্মাণ ও এ-সংশ্লিষ্ট ভূমি এবং জলের অন্যান্য ব্যবহার।
জরিপে দেখা যায়, বেড়েছে সামাজিক বনায়নের পরিমাণ। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ৩৬৭ বর্গকিলোমিটার বনায়ন বেড়েছে। আট বছরে বেড়েছে ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। প্রাকৃতিকভাবে পুনরুজ্জীবিত বন কমেছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং কাঠের জমি কমেছে ১৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ
২০১৫ থেকে ২০২৩ সালে শহরে ভবন, রাস্তায় ব্যবহৃত ভূমির পরিমাণ বেড়েছে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ। কাষ্ঠ শস্য বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ, ম্যানগ্রোভ বন বেড়েছে প্রায় ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। তৃণভূমি ও উপকূলীয় জলাশয় বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এ সময়ে ৩৫০ বর্গকিলোমিটার (৫৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ) তৃণভূমি বেড়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জলাশয় এবং আন্তঃজোয়ার উপকূল বেড়েছে প্রায় ৬৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
দেশে কৃষি ও বনভূমি কমে যাওয়া ভীতিকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল হাসানের মতে, বাংলাদেশে অধিক জনসংখ্যা ও চাহিদার কারণে তৈরি হচ্ছে বসতি ও শিল্প-কারখানা। এর প্রভাব পড়ছে ভূমির ওপর।ঢাকার আয়তন বেড়েছে, নগর বড় হয়েছে। কিন্তু সেটার কারণে কৃষি বা বনভূমিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এটা একটি ভীতিকর অবস্থা। এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এ অবস্থা আরো খারাপ হবে।
বাংলাদেশ এমনিতেই সবচেয়ে জনঘনত্বের দেশ। তার ওপর যদি এভাবে কৃষিজমি কমতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দেশে আকাল হবে। খাদ্য নির্ভরতা দেশের মর্যাদা ও সুনামকে ক্ষুণ্ণ করবে। এ সমস্যা নিয়ে এখন থেকে না ভাবলে ভবিষ্যতে জটিল পরিস্থিতে পড়তে হবে।