কুতুবদিয়ার প্যারাবন রক্ষায় কঠোর হতে হবে

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ায় কয়েক দশক আগেও অন্তত ১ হাজার ২০০ একর প্যারাবন (ম্যানগ্রোভ) ছিল। ১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপের সুরক্ষাপ্রাচীর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল প্যারাবনকে। কিন্তু গত তিন দশকে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে দ্বীপের সুরক্ষাপ্রাচীর। এই সময়ে ৯০০ একর প্যারাবন ধ্বংস হয়েছে লবণ মাঠ তৈরির জন্য। টিকে থাকা বাকি ৩০০ একর প্যারাবনও হুমকিতে পড়েছে লবণ চাষের কারণে।

কুতুবদিয়া বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি শাহরিয়ার চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কুতুবদিয়া দ্বীপের চারপাশে প্যারাবন থাকার পরও ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপজেলায় অন্তত ২৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। প্যারাবন উজাড় হওয়ায় বড় ঝড় হলে দ্বীপে ১৯৯১ সালের চেয়েও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে । তিনি বলেন, এখন প্রবল গতিবেগসম্পন্ন আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে দ্বীপে জানমালসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। বর্তমানে এই উপজেলার লোকসংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার।
ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগম বলেন, ১৯৯০ সালের শেষ দিকেও খুদিয়ারটেকে লোকবসতি ছিল ৪০ হাজার। এখন কেউ নেই। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে খুদিয়ারটেকের অন্তত তিন হাজার একর ভূমি সাগরে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া সাগরে বিলীন হয়েছে ২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়ণকেন্দ্র, ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২টি মক্তব-মাদ্রাসা, ৩০টি মসজিদ ও ১০ হাজার ঘরবাড়ি। খুদিয়ারটেকের বাস্তুহারা অন্তত ৩০ হাজার মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন শত কিলোমিটার দূরের কক্সবাজার শহরে বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশের সমুদ্র উপকূলীয় সরকারি জমিতে।

কুতুবদিয়াকে ‘ক্লাইমেট হট স্পট’ উল্লেখ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, প্রতিনিয়ত দুর্যোগের আঘাত, তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় মানুষের জীবন–জীবিকা হুমকিতে পড়েছে। সাগরগর্ভে বিলীন হতে হতে দ্বীপের আয়তন এখন ২৫ বর্গকিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। গত তিন দশকে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে দ্বীপ ছাড়লেও জমির পরিমাণ কমছে। সবুজবেষ্টনী সৃজন, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ না নিলে সংকট আরও বাড়বে।
এ কথাগুলো শোনা ও ব্যবস্থা নেওয়ার কি কোনো কর্তৃপক্ষ আছে? এ ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত থাকেন তারা সবসময় কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকেন। সরকার বদল হয় কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় না। আমরা আশা করব এখন সুযোগ আছে এসব দুর্বৃত্তের হাত থেকে কুতুবদিয়াজে রক্ষার। শুধু প্রয়োজন আন্তরিকতার।