‘কামরুল ভাই নুরনবীকে মারার জন্য একটি কালো ছুরি কিনে আনেন। ২৪ আগস্ট রাত অনুমান ১২টা ১০ মিনিটে কামরুল নুরনবীর মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করলে চিৎকার করতে থাকে সে। তখন আরও ২/৩ বার ইট দিয়ে আঘাত করেন। তখন ইটটি ভেঙে যায়। আমি মনে করি, যদি নুরনবী ইটের আঘাতে মারা না যায় তাহলে সে পাগল হয়ে ঘুরবে তার এই কষ্টটা আমার সহ্য হবে না। তাই নুরনবীর পেটে ছুরি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করি।’
জামালপুর থেকে গ্রেফতার হওয়া কিশোর মো. হোসাইন তার বন্ধু নুরনবীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছে তার অংশবিশেষ। কী কারণে হত্যা করেছে তারও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে সে আদালতে। তার আগে প্রতিবেশী কামরুল ইসলামসহ মিলেমিশে নুরনবীকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে তারা। অপহরণের পর পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করাই ছিল তাদের টার্গেট।
এজন্য কৌশলে ঢাকা থেকে প্রথমে ওই কিশোরকে নেওয়া হয় ফেনীতে, এরপর চট্টগ্রামে। এরই মধ্যে অপহরণকারীরা বিকাশে স্বজনদের কাছে টাকাও দাবি করে। তবে কিশোরের পরিবার বিষয়টি পুলিশকে জানানোয় ধরা পড়ার ভয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাতের পর ছুরিকাঘাতে হত্যা করে তারা। ২৫ আগস্ট চট্টগ্রামের হিলভিউ আবাসিক এলাকার একটি সড়কের পাশ থেকে পুলিশ নুরনবীর লাশ উদ্ধার করে।
পরিবারের সঙ্গে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ধলপুর চাঁন মিয়া বেপারীর বাসায় থাকত হোসাইন। একই স্থানে থাকে নুরনবীর পরিবার। তারা বন্ধু ছিল। এমনকি নুরনবী হোসাইনকে মামা বলে ডাকতো। হোসাইন মায়ের ট্রাঙ্ক থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে খরচ করে ফেলে। মা সে টাকার জন্য বকাঝকা করলে কামরুলসহ মিলে নুরনবীকে অপহরণ করে তার বাবার কাছ থেকে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করে তারা।
এটি একটি ঘটনা নয় এবং কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনাও নয়। এ ধরনের ঘটনা এখন প্রায় ঘটছে। কিশোর অপরাধ এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাতে গভীরভাবে আতঙ্কিত না হয়ে পারা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এখন একেবারে খাদের কিনারে এসে ঠেকেছে। এখনই সজাগ না হলে মস্ত বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে, আদালতের সাজা দিয়ে এই সর্বনাশা পতন রোধ করা সম্ভব হবে না। এরজন্য পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রচুর কাজ করতে হবে। এরজন্য সামাজিক জাগরণ তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে বিলম্ব করার সময় নেই।
এ মুহূর্তের সংবাদ