কালুরঘাট সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই

কালুরঘাট সেতু। ছবি: রনি দে

বহুল প্রতীক্ষিত কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর রেল–কাম সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি অবশেষে একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

আনুষঙ্গিক যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে সেতুর কাজ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি শুরু হবে। তবে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ আগামী ৬ মাসের মধ্যে শুরু হবে। প্রকল্পের ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকার মধ্যে ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের। বাকি ৭ হাজার ১২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা দেবে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএফ)।

মূল প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৭০০ মিটার রেল–কাম রোড ব্রিজ নির্মাণ, ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার সড়ক ভায়াডাক্ট, ৪ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার বাঁধ, ১১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং আনুষাঙ্গিক কাজ।
প্রকল্পটি ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তখন একনেক থেকে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়। পরে নতুন নকশায় সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা আগের প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত ব্যয়ের ১০ গুণের বেশি।

প্রকল্পের ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন একটি রেল সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সরকারি অর্থায়নে ২০১২ সালে এসএমইসি ও ডব্লিউআইইসিওএন কোং লিমিটেড এবং বাংলাদেশের এসিই কনসালটেন্ট লিমিটেড ও ইঞ্জিনিয়ার কনসোর্টিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করে। সরকার সেতু নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার অনুরোধ জানালে ইডিসিএফের নিয়োজিত পরামর্শক আগের ফিজিবিলিটির ভিত্তিতে নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ৭ দশমিক ৬২ মিটার বিবেচনা নিয়ে ২০১৬ সালে পুনরায় প্রকল্পের ফিজিবিলিটি সম্পন্ন করে।

এ ফিজিবিলিটি স্টাডির আলোকে রেল–কাম সড়ক সেতু নির্মাণের জন্য প্রণীত প্রকল্পের ডিপিপি ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। তখন সেতুটি পদ্মা সেতুর আদলে দ্বিতল নকশা করায় প্রকল্পটি অনুমোদন না দিয়ে সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়, প্রস্তাবিত সেতুর সড়ক ও রেল সেতুর জন্য আলাদা ডিজাইন প্রণয়ন করে পুনরায় একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য।
নতুন সেতু হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজার, বান্দরবান ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এ সেতু দক্ষিণ চট্টগ্রামকে পুরো দেশের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। চাপ কমাবে চট্টগ্রাম শহরের আবাসন সংকটের ওপরও। এ সেতুর কারণে বোয়ালখালী ও পটিয়ার পূর্বাংশে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। সে সঙ্গে নতুন করে কক্সবাজার পর্যন্ত যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার সুফলও পাবে জনগণ।