কালুরঘাট সেতু : দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের পথে

কালুরঘাট সেতু। ছবি: রনি দে

কালুরঘাটে একটি নতুন সেতুর দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে অনেক। কত নেতা কতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কতবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চার টার্মে এসে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ঋণচুক্তি সাক্ষরিত হলো বৃহস্পতিবার।
এরই মধ্যে বোয়ালখালির দুজন সংসদ সদস্য যথাক্রমে মঈনুদ্দিন খান বাদল ও মোছলেমউদ্দিন আহমেদ মৃত্যুবরণ করেছেন, যাঁরা এই দাবির পক্ষে থাকলেও জীবদ্দশায় সেতু নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেওয়াতে পারেননি।
এরপর কর্ণফুলীতে অনেক জল গড়ানোর পর বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সিইও ইয়ুন হি সাং ঋণ চুক্তিতে সই করেন।
চুক্তি অনুযায়ী চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল-কাম-রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের সহজ শর্তের ঋণ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯ হাজার ৫৩৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ধরে)। এ বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। প্রকল্পটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে বাস্তবায়ন করবে। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা জিওবি ফান্ড থেকে ব্যয় হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ পরিশোধ করা হবে ৪০ বছরে। প্রতি বছর ২শ; কোটি টাকা করে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আগামী ১৫ জুলাইয়ের পর প্রকল্পটি একনেকে উঠবে। একনেকে অনুমোদনের এরপর পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে এবং ডিজাইন হবে। তারপর টেন্ডার আহ্বান করা হবে। টেন্ডার আহ্বান করা হবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে। সেতুর মূল কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় হবে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা
রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম আশা প্রকাশ করেন, নতুন অর্থবছরেই এ প্রকল্পে কোরিয়ান ঋণের অর্থ মিলবে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়শা খান বলেন, চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই এই রেল-কাম-রোড সেতু নির্মিত হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতু সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। ১৯৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। পরের বছর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা।
তবে গতবছর কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পর কালুরঘাটে নতুন একটি রেল-কাম-রোড সেতুর প্রয়োজনীয়তা তীব্র হয়ে উঠছিল। কারণ এই সেতুর কারণে পুরোপুরি রেলসুবিধা পাওয়া যাচ্ছিল না।
নতুন একটি সেতুর জন্য চট্টগ্রামবাসীর আগ্রহের শেষ নেই। অনেক আগেই এই সেতুর কাজ শুরু হওয়ার দরকার ছিল। কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ শুরুর সঙ্গে যদি এই সেতুর উদ্যোগটি নেওয়া হতো তাহলে হয়ত এতদিন সেতুর কাজ শেষ হয়ে আসতো। তারপরও বলতে হবে একদম না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়াও ভালো।