কালবৈশাখীর তাণ্ডব

নিহত দুজন, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও ফসলের ক্ষতি

ফটিকছড়ি, লোহাগাড়, চকরিয়া প্রতিনিধি, প্রতিবেদক খাগড়াছড়ি »

কালবৈশাখীর তাণ্ডবে দেশগ্রামে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফটিকছড়ি ১ ও লোহাগাড়ায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্নস্থানে ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
ফটিকছড়ির কাঞ্চন নগর ইউনিয়নে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে রিনা আক্তার (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড ঝরঝরি নামক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা আক্তার ওই এলাকার মো. শাহ আলমের স্ত্রী। তার ২ ছেলে ও এক মেয়েসন্তান রয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. এনামুল হক জানান, খবর পেয়েছি সকালে উত্তর কাঞ্চননগরের ঝরঝরি এলাকার মো শাহ আলমের স্ত্রী গরু আনতে গেলে মাথায় গাছের ডাল ভেঙে পড়লে গুরুতর আহত হন। তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়িতে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ ঝড়ো বাতাসে গাছপালা ভেঙে যায় ও বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
কালবৈশাখীর হঠাৎ ঝড়ে গুইমারা বাজার এলাকায় গাছ ভেঙে গিয়ে খাগড়াছড়ি চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ গাছপালা সরিয়ে সাড়ে ১০টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। এছাড়াও ভোররাতে হঠাৎ করে ঝড়ো বাতাসে ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল খাগড়াছড়ি সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায়। ঝড়ো হাওয়ায় আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল বাগানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
গুইমারার বড়পিলাক এলাকার ফল বাগানী সাইফুল বলেন, আম বাগানে এখন ফলনে ভরপুর। আগামী মাসে আম বাজারজাত করার প্রস্তুতি ছিল। হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ায় বাগান লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গুইমারায়। গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি সড়কের গুইমারা বাজারে গাছ পড়ে ২ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। সওজ বিভাগ গাছ সড়ক থেকে অপসারণ করে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার জানান, ঝড়ো হাওয়ায় বেশ কিছু এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সমাধান করে ধাপে ধাপে সংযোগ চালু করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

লোহাগাড়া

লোহাগাড়ায় কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ভেঙেছে শতাধিক গাছপালা। ভেঙে পড়া গাছ কাটতে গিয়ে গাছের চাপায় মারা গেছে জিল্লুর রহমান (৪০) নামে একজন। তিনি উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের নারিশ্চা গ্রামের বাসিন্দা ও গাছ ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। কালবৈশাখীর তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুৎ লাইনের ১০/১২টি খুঁটি ভেঙে পড়েছে বলে জানা গেছে। ফলে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি চট্টগ্রাম-১, লোহাগাড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. শাহজাহান জানান, এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির নির্ণয়সহ মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ গেটের সামনে ভেঙে পড়া গাছের ছাপায় সাহাব উদ্দীনের চায়ের দোকান ভেঙে যায়। চরম্বা ইউনিয়নের নাছির মোহাম্মদ পাড়ায় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙে গেছে ঝড়ো হাওয়ায়। কলাউজানে গাছের চাপায় ভেঙে গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এছাড়া এলাকার রবি ও বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

চকরিয়া

চকরিয়ায় ১৫ মিনিটের কালবৈশাখীর তাণ্ডবে শতাাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত শিলাবৃষ্টির কারণে সবজিসহ রকমারি ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধান হয়েছে বলে ধারণা করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। বুধবার কাল সাড়ে ১১টার দিকে পুরো উপজেলায় হঠাৎ করে কাল বৈশাখীর ঝড়-বাতাস শুরু হয়। সাথে শিলাবৃষ্টিও পড়ে।
কালবৈশাখী তাণ্ডবের পর সকাল সাড়ে ১০টার থেকে রাত আটটায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত সমগ্র চকরিয়া উপজেলা বিদ্যুৎহীন রয়েছে। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কক্সবাজারের সভাপতি মো.হায়দার আলী। তিনি বলেন, কালবৈশাখী তাণ্ডবে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বসতঘর ছাড়া সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ তার ছিঁড়ে গেছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার মুলকেন্দ্র দোহাজারী লাইনে গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্ট বলেন, কালবৈশাখীর ছোবলে উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ায় বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। ি
এছাড়া উপজেলার একাধিক ইউনিয়নে রকমারি সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
চকরিয়া পৌরসভার কাজিরপাড়ার কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, কালবৈশাখী সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় সবজি ক্ষেতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। মাতামুহুরী নদীর তীর লাগোয়া কাজিরপাড়া বিলের বেশিরভাগ কৃষকের সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃর্ষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন বলেন, সরেজমিন সবজি ও ফসলি ক্ষেতের ক্ষতির পরিমাণ নির্র্ণয় করতে ব্লক পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়া হবে।