সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশের দুই অঞ্চলের বাউলশিল্পীর গানের কথায় আশ্চর্য মিল! ‘মালো মা’ গানের স্রষ্টা কে? উঠছে প্রশ্ন।
কোক স্টুডিও সিজন ৩-র সাম্প্রতিক নিবেদন ‘মালো মা’। গত শুক্রবার এই গান রিলিজের পর থেকেই ট্রেন্ডিংয়ের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশে। ওপার বাংলাতেও প্রশংসা কুড়োচ্ছে ‘মালো মা’। তবে এই গানের গীতিকার কে? সেই প্রশ্নে উত্তাল বাংলাদেশ। কোক স্টুডিও বাংলার তরফে উল্লেখ করা হয়েছে এই গান লিখেছেন, খালেক দেওয়ান। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, এই গানের আরেকটি ভার্সন ‘মাগো মা’ লিখেছেন নেত্রকোনার সাধক রশিদ উদ্দিন।
‘মালো মা’ গেয়েছেন খালেক দেওয়ানের নাতি আরিফ দেওয়ান ও সাগর দেওয়ান। অথচ এই গানকে কেন্দ্র করেই নেত্রকোণায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হল। সাধক রশিদ উদ্দিনের ছোট ছেলে কালা মিয়া-সহ এলাকার প্রাক্তন সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস-সহ আরও অনেকেই যোগ দেন সেই প্রতিবাদ সভায়। সেদেশের সংবাদ মাধ্যমের কাছে কালা মিয়া স্পষ্ট দাবি করেন, ‘মালো মা’ গানের স্রষ্টা রশিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ১৯৩৫ সালে ‘মাগো মা’ গানটি লিখেছিলেন রশিদ। পালটা যুক্তি দিচ্ছেন, খালেক দেওয়ানের নাতি আরিফ দেওয়ান।
বাংলাদেশের দুই অঞ্চলের অতি পরিচিত বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন ও খালেক দেওয়ান বহু বছর আগেই পরলোক গমন করেছেন। হাজার হাজার বাউল গান রচনা করেছেন তাঁর। বয়সে, রশিদ উদ্দিনের চেয়ে বছর কুড়ি বয়সের ছোট খালেক দেওয়ান। তাঁরা কি পরস্পরকে চিনতেন? তাঁদের কি যোগাযোগ ছিল? এই প্রশ্নেরও সুস্পষ্ট উত্তর নেই, তবে আশ্চর্যজনক মিল রয়েছে দুটি গানে। কোক স্টুডিওর জন্য এই গানটি অ্যারেঞ্জ এবং কম্পোজ করেছেন প্রীতম হাসান।
মাগো মা লেখেন রশিদ উদ্দিন
ভাটি অঞ্চলের সাধক বাউল রশিদ উদ্দিনের জন্মেছিলেন ১৮৮৯ সালে, ১৯৬৪ সালে (বাংলাদেশের জন্মের আগে) মৃত্যু হয় তাঁর। হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন। নেত্রকোনার এই বাউল মালজোড়াগানের সাধক হিসেবে পরিচিত। নেত্রকোণার লোকসঙ্গীত গবেষক অধ্যাপক যতীন সরকারের কথায়, এই গান রশিদ উদ্দিনেরই গান।
রশিদ উদ্দিনের নাতি আবুল কায়েস বলেন, জীবদ্দশায় নিজের গানের পাণ্ডুলিপি লিখেছিলেন রশিদ উদ্দিন। মূল পাণ্ডুলিপি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকায় সেগুলোর অনুলিপি তৈরি করেছে পরিবার। রশিদ উদ্দিনের মৃত্যুর পর অনুলিপি লেখার কাজটা করেছেন তাঁর শিষ্য চান মিয়া দেওয়ানের ভাই দলিল লেখক সুরুজ আলী। রশিদ উদ্দিনের গানের অনুরাগী ছিলেন সুরুজ। তিনিও আর বেঁচে নেই। ২০১৩ সালেই প্রথমবারের মতো ‘মাগো মা’ গানটি বইয়ে ছাপা হয়েছে; এর আগে গানটি কোথাও প্রকাশের দালিলিক প্রমাণ মেলেনি।
রশিদ উদ্দিনের জন্মের দু-দশক পর ১৯০৯ সালে বাউলশিল্পী খালেক দেওয়ানের জন্ম ঢাকার কেরানীগঞ্জের বামনসুর গ্রামে। ২০০৩ সালে প্রয়াত হন তিনি। তাঁর নাতি শাকির দেওয়ানের দাবি, ১৯৫০ সালে ‘মালো মা’ রচনা করেন রশিদ । ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত খালেকের নিজের লেখা ‘দেওয়ান গীতিকা’ বইয়ে ‘মালো মা’ গানটি রয়েছে। ইমদাদুল হক মিলনের ‘নূরজাহান’ উপন্যাসেও এই গানের কথা রয়েছে। তবে গানটির মূল স্রষ্টা কে? সেই বিতর্ক এখনও জারি রয়েছে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস