মোহাম্মদ রফিক :
আদালতের নির্দেশে ডিভিশন সুবিধা পেলেও মন ভাল নেই সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যা মামলার এ আসামি গত ২১ দিন ধরে বন্দি আছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে।
কেমন কাটছে এক সময়ের দোর্দ- প্রতাপশালী এ পুলিশ কর্মকর্তার বন্দিজীবন, এমন প্রশ্ন করলে কারা কর্মকর্তারা জানান, কারাগারে সাবেক ওসি প্রদীপের বন্দিজীবন কাটছে চরম হতাশা এবং বিষণœতায়। খাওয়া-দাওয়াও ঠিকভাবে করছেন না। তবে তিনি কারারক্ষীসহ সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করছেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন জানান, দুদকের মামলায় হাজির করতে গত ১২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়েছিল সাবেক ওসি প্রদীপকে। ১২ দিন পর্যন্ত তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে বন্দি রাখা হয়েছিল। গত ২৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা আদালত থেকে তাকে ডিভিশন সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশনা আসে। এরপর থেকে সাবেক ওসি প্রদীপকে ডিভিশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। কারাবিধি অনুয়ায়ী ডিভিশন সুবিধার আওতায় একজন বন্দির যতটুকু সুবিধা পাওয়ার কথা তাকে সে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
তবে কারাগারে পুলিশের এ সাবেক কর্মকর্তার মন ভাল নেই বলে জানান সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন। তিনি জানান, ডিভিশন সুবিধা পাওয়ার পর ৩-৪ দিন ফুরে ফুরে মেজাজে থাকলেও গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রদীপের মন ভাল নেই। সারাক্ষণ বিষণœতায় ভোগেন। কথা বলছেন কম। মাঝেমধ্যে খেতে চান না। তবে সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেন।
সুত্রটি জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশ অনুসারে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় প্রদীপ তার কোনো আত্মীয়-স্বজন বা আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। তবে তিনি চাইলে আত্মীয়-স্বজন ও আইনজীবীদের সঙ্গে কারাবিধি অনুযায়ী টেলিফোনে কথা বলতে পারবেন। মূলত আদালতের নির্দেশনার পর থেকে হতাশায় ভুগছেন প্রদীপ।
কারা কর্মকর্তারা জানান, এমনিতেই করোনাকালে কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে কারা কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থা নিয়েছে। বিষয়টি অবহিত করলে আদালত আত্মীয় স্বজন ও আইনজীবীদের সঙ্গে প্রদীপের দেখা-সাক্ষাৎ না করার ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আশফাকুর রহমান। এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর আত্মীয়-স্বজন ও আইনজীবীর সঙ্গে প্রদীপ সাক্ষাৎ পারবেন বলে আদেশ দিয়েছিলেন একই বিচারক।
জেল কোড অনুযায়ী, সাজাপ্রাপ্তরা কারাগারে ডিভিশন-১, ডিভিশন-২, ডিভিশন-৩ ক্যাটাগরিতে থাকেন। এর মধ্যে বিশেষ যোগ্যতা বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ বন্দিরা (ডিভিশন ১ ও ২ প্রাপ্ত) সাধারণ বন্দিদের (ডিভিশন-৩) তুলনায় বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন। জানা গেছে, কারা বিধি অনুসারে ডিভিশনপ্রাপ্ত প্রত্যেক বন্দির জন্য আলাদা রুম থাকে। খাট, টেবিল, চেয়ার, তোষক, বালিশ, তেল, চিরুনি, আয়না ইত্যাদি থাকে। তার কাজকর্ম করে দেয়ার জন্য আরেকজন বন্দীও দেয়া হয়। তাছাড়া তিনি বইপত্র এবং তিনটি দৈনিক পত্রিকা পাবেন। সাধারণ বন্দিদের চেয়ে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির খাবারের মানও ভাল।