নিজস্ব প্রতিবেদক <
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি মো. ফরহাদ হোসেন রুবেল (২০) কে নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে নরসিংদী জেলার আদিয়াবাদ শেরপুর কান্দাপাড়া চরাঞ্চল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ সাংবাদিকদের বলেন, পলাতক আসামি মো. ফরহাদ হোসেন রুবেল সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের ৫ তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বন্দী ছিল। সে ৬ মার্চ ভোর ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের ৫ তলা থেকে নিচে নামে। এরপর ভবনের নিচের পানির হাউস থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে ভবনের ডানপাশের গেট দিয়ে বের হয়। পরে ওই ভবন থেকে ২০০ গজ দূরে নির্মাণাধীন ভবনের চার তলায় উঠে সেখান থেকে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে নিরাপত্তা প্রাচীরের অপর প্রান্তে লাফিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সেখান থেকে ১০ ফুট উচ্চতার সীমানা প্রাচীর পার হয়ে সকাল ১০টা ৭ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম থেকে রেলযোগে ঢাকা হয়ে নরসিংদীর তার ফুফুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সকাল ৯ টার দিকে নরসিংদীর কান্দাপাড়া চরাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, রুবেল প্রায় ৬০ ফুট উঁচু থেকে লাফ দেওয়ার কারণে তার পায়ে আঘাত পেয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার মামলায় তাকে আদালতে হাজির করা হবে। সুস্থ হওয়ার সাপেক্ষে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
এতো উঁচু থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পলাশ কান্তি নাথ বলেন, প্রথমে আমাদের কাছে বিষয়টা অবিশ্বাসী মনে হলেও সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায় ব্যাপারটা সত্যি।
তিনি আরো বলেন, রুবেল অভ্যাসগত একজন দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী। এর আগেও তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা ছিল। এছাড়া শারীরিক ও মানসিকভাবে সে খুবই শক্ত। শারীরিক সক্ষমতার কারণে সে চাকু নিয়ে ঘুরাফেরা করায় তাকে এলাকায় সবাই ভয় পায়। সে সুযোগে ছিনতাই করার সময় ভিকটিমরা জিনিসপত্র দিয়ে দিতো। সে মানসিক শক্তিটা কাজে লাগিয়ে কারাগারের ৬০ ফুট উঁচু থেকে লাফ দিতে পেরেছে। শারীরিকভাবে শক্ত হওয়ায় লাফ দেওয়ার পরে সে পায়ে সামান্য আঘাত পেয়েছে। তার পায়ে এক্সরে করে দেখা গেছে সামান্য আঘাত ছাড়া তার পায়ের হাড় ভাঙেনি।
তাকে পালিয়ে যেতে কেউ সহযোগিতা করেছে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পলাশ কান্তি নাথ বলেন, এ বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। অসুস্থ থাকার কারণে তাকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। এছাড়া তদন্তের সাপেক্ষে কিছু বিষয় গোপন রাখা হচ্ছে। তদন্তের পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন বলেন, কারাগারে প্রতিদিন কয়েদি গণনা করার সময় ওয়ার্ডের তালা খুলে দেওয়া হয়। পলাতক আসামি রুবেল সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেদিন যখন তালা খুলে দেওয়া হয় তখন সে সুযোগ বুঝে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। হত্যা মামলায় কারাবন্দী থাকার আগেও বিভিন্ন মামলায় সে কারাগারে ছিল। কারাগারে থাকার সুবাধে কারাগারের প্রত্যেকটি জায়গা তার চেনা। সে কারণে তার মাথায় এসেছে সে পালিয়ে যেতে পারবে এবং সে চার তলার নির্মাণাধীন ভবন থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যেতে পেরেছে।
উল্লেখ্য, বিগত ৬ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদী মো. ফরহাদ হোসেন রুবেল নিখোঁজ হয়। সেদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পাওয়া জেলার মো. রফিকুল ইসলাম কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে খুলনা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক ছড়ির মিয়াকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনা করা হয়। এছাড়া তাকে খুঁজতে গত ৮ মার্চ ফায়ার সার্ভিসের তিনটি দল কারাগারের অভ্যন্তরে সব ড্রেন ও সেপটিক ট্যাংকগুলোতে তল্লাশি চালায়।