কারণ ছাড়া চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে

দুই সপ্তাহের মধ্যে সরু চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে ২০/৩০ টাকা। এ বছর রোজার শুরুতেই লেবু, বেগুন ও শসার দাম বেড়ে যায়। পরে পণ্য তিনটির দাম কিছুটা কমলেও তা এখনো চড়া রয়েছে। রোজার শুরুর দিকে আকারভেদে এক হালি লেবু ৫০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। পরে সেই দাম কিছুটা কমে ৪০-৭০ টাকা হয়। বেগুন ও শসারও একই অবস্থা।
তবে কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে মিনিকেট চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে রশিদ, ডায়মন্ড, সাগর, মোজাম্মেল ইত্যাদি ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল জনপ্রিয়। খুচরা দোকানে এসব ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ৮৫ টাকা ৮৮ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি দাম মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের। পত্রিকার খবর অনুযায়ী প্রতি কেজি মোজাম্মেল চাল ৯৮ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমন মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে মিনিকেট চালের মজুতও শেষের দিকে। সরবরাহ কমায় ও ধানের দাম বাড়ায় মিনিকেট চালের দামও বেড়েছে। দাম বাড়ায় মিনিকেটের বিক্রি আগের তুলনায় কমেছে।
সুপ্রভাতের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, দেশের চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে অব্যাহত চাল আমদানির সুযোগের পাশাপাশি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বাজারে তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। চাল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মধ্যস্বত্ত্ব কারবারী ও মিলাররা যোগসাজস করেই চালের. দর চড়া রেখেছেন। এ বছর চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। রোজায় অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে পারলেও চাল কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
সরকারি তথ্য মতে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে খাদ্যশস্যের মোট মজুত ছিল ১৫ লাখ ৯ হাজার ৬৪৭ টন। যার মধ্যে চালের মজুত ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৮০৪ টন, ধান ১২ হাজার ৫০৬ টন এবং গমের মজুত ৪ লাখ ১৬ হাজার ৫৩২ টন। গত ১৮ ডিসেম্বর সরকারি চালের মজুত ছিল ৭ লাখ ৫০ হাজার ৯৫৬ টন, ২২ ডিসেম্বর ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৮৯২ টন, ১ জানুয়ারি ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬২ টন এবং সবশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখ ৩২ হাজার ৭০ টনে। আর গত ১৭ নভেম্বর থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত স্থল বন্দর দিয়ে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি করেছে সাত প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সারাদেশে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৯২ প্রতিষ্ঠানকে। যার মধ্যে দুই লাখ ৭৩ হাজার টন সেদ্ধ এবং এক লাখ ১৯ হাজার টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।
স্থলবন্দরের তথ্যমতে, শুধুমাত্র বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত চার মাসে ভারত থেকে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি হয়েছে। চাল আমদানির জন্য সরকার আবারও একমাস সময় বৃদ্ধি করেছে। সে হিসেবে চালের সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে আমদানি। যার ফলে চালের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিকতা থাকে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কাজেই দাম বাড়াবার কারণ অনুসন্ধানে সরকার তৎপর হবে বলে আশা করি।