পাহাড় কাটায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি চান মেয়র
পাহাড় কাটার জড়িত কাউন্সিলরজসিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো বালির। বিভিন্ন কারণে সহজে ধসে পড়ে। পাহাড় প্রকৃতির সৃষ্টি, পাহাড় গড়া যায় না। অথচ পাহাড়কে ধ্বংস করছে দখলদাররা। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের। তাই অবৈধ পাহাড় দখলদারদের শুধু ৫০ হাজার বা এক লাখ টাকা জরিমানা নয়, আরও কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা দরকার।’
গতকাল রোববার নগরীর পর্যটন মোটেল সৈকতের সাঙ্গু হলে নগরীর পাহাড় কাটা রোধে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাসোসিয়েশন পর ল্যান্ড রিফ্রম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ফোরাম ফর প্ল্যান চট্টগ্রাম (এফসি) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
মেয়র আরও বলেন, ‘পাহাড় দখলে অনেক সময় ভুয়া দলিল করে সিডিএ থেকে প্ল্যান করে নিচ্ছে। সরেজমিন তদন্ত করে সিডিএকে প্ল্যান অনুমোদন দিতে হবে। পাহাড় রক্ষায় প্রয়োজনে চসিক দায়িত্ব নেবে। তবে চসিকের সীমাবদ্ধতার কথা ভাবতে হবে। দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি মানুষের অসাধ্য কিছুই নাই। সমস্ত সংস্থাকে একত্রিত করে কাজ করতে চায় চসিক।’
মেয়র আরও বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় একটি হটলাইন প্রতিষ্ঠা ও এর জন্য আলাদা ইনফোর্সমেন্ট টিম থাকার দাবিটি যৌক্তিক। ৯৯৯ এর মতো পরিবেশ সুরক্ষায় যেন সবাই সাথে সাথে তথ্য দিয়ে ফল পায় সেটা আমাদেরও করতে হবে। দ্রুততার সাথেই আমরা চট্টগ্রামে একটি কমিটি করবো যাতে আর একটিও পাহাড়ে কোপ না পড়ে।’
সভায় সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরে যেসব পাহাড় কাটা হয়েছে তার মধ্যে হিসেব অনুযায়ী ৭৪ শতাংশ পাহাড় শুধু পাঁচলাইশ মৌজাতেই। আমরা আশা করি আজকের মতবিনিময়ের পর খুব দ্রুততার সাথেই একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হবে। পাহাড়গুলো সুরক্ষায় সাইনবোর্ড স্থাপনের যে নির্দেশনা তা বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্ট এবং সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারি হওয়া পাহাড় কাটায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়িতে কাটা হয়েছে পাহাড়। পাহাড় কেটে কিভাবে জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে? ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামে ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার পাহাড় ছিল। ২০০৮ সালে তা কমে ১৪ দশমিক দুই বর্গকিলোমিটারে নেমে আসে।
সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারি হওয়া আদেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৮৩ সালে সরকারি আদেশ ছিল চট্টগ্রামের কোথাও কোন পাহাড় কাটা যাবে না। ২০০৭ সালে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল- ‘জাতীয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা যাবে না’। উচ্চ আদালত ২০১২ সালের ১৯ মার্চ আদেশ জারি করেছিলেন, ‘চট্টগ্রামম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে কোন পাহাড় কাটা যাবে না।’ এসব সরকারের বিধিািনষেধ উপেক্ষা করে পাহাড় কাটা হয়েছে। পাহাড় কেটে কীভাবে জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে সেটি আমাদের মাথায় ধরে না।’
সভায় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম নগরের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, ‘আমরা গত কয়েক বছরে মোট ৮৫টি মামলা করেছি। এর মধ্যে শুধু ২০২২ সালে এই মামলার সংখ্যা ২২টি। আমরা যে আইনের ভেতরে আছি তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু চসিক, সিডিএ এবং জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সহযোগিতা না পাওয়ায় আমরা সফল হচ্ছি না। সিডিএ যদি নকশা অনুমোদন না দেয়, তাহলে অভিযান চালাতে আমরা বাধাগ্রস্ত হবো না।’
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (সিডিএ) এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমরা ড্যাবকে ব্যবহার করে পাহাড় কাটা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে আমরা পাহাড় রক্ষা করতে পারবো।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
সভায় বক্তারা আকবরশাহ এলাকার পাহাড় কাটার সাথে জড়িত কাউন্সিলর জহুরুল আলমের জসিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এবং পাহাড় সুরক্ষায় বনায়নসহ বিভিন্ন সুপাারিশ করেন।
সভায় ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার খান, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের এসি (ল্যান্ড) উমর ফারুক বক্তব্য রাখেন।