নিজস্ব প্রতিবেদক »
৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘মানুষ সচেতন না হলে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে নেওয়া প্রকল্পের সুফল মিলবে না। আমাদের প্রকল্পের কাজ যেহেতু সিংহভাগ শেষ, এবার অনেকটুকু সুফল পাওয়া যাবে।’
তিনি গতকাল মঙ্গলবার নগরের দামপাড়ায় দুপুর ২টায় ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পের অবস্থা ও অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী।
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের জুলাইয়ে এ প্রকল্পের কাজ অফিশিয়ালি শুরু হলেও ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৮ সালের ৯ জুলাই। এরপর করোনার সময়ে আমরা কাজ করেছি। তবে গতি কমে ছিল। ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার প্রকল্পে আর্থিক অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ (৩ হাজার ১৮ কোটি ১৫ লাখ) হলেও আমাদের কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ করতে গিয়ে চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার ১০টি কারণ দেখেছি। এগুলো হলো- খালের অবৈধ দখল, সব ধরনের আবর্জনা খালে ফেলা এবং খালকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা, অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খালের সাথে ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিকল্পিত সংযোগ না থাকা, নিয়মিত খাল ও ড্রেন পরিষ্কার না করা, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের মাধ্যমে ব্রিজ ও কালভার্টের পানি প্রবাহ ব্যাহত হওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পবর্জ্যরে অপরিকল্পিত নিষ্কাশন, জোয়ার-ভাটার প্রভাব এবং উঁচু-নিচু ভূমির রূপ।
প্রকল্পের কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পে আমরা ১৭৬ কিলোমিটারের রিটেইনিং ওয়াল, ৪৫টি ব্রিজ, ৬টি কালভার্ট, ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটারের রোড সাইড ড্রেন, ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটারের নতুন ড্রেন, ৫টি রেগুলেটর, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ, ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের খালপাড়ের রাস্তা, ৫০ কিলোমিটারের ফুটপাত করার কথা। এরমধ্যে ব্রিজ, কালভার্ট, রোড সাইড ড্রেন, নতুন ড্রেনের কাজ শতভাগ শেষ করেছি। রিটেইনিং ওয়াল ১১৮ কিলোমিটার (৬৭ দশমিক ০৫ শতাংশ), সিল্ট ট্র্যাপ ১৩টি (৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ), খালপাড়ের রাস্তা ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, ফুটপাত ৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার (১১ শতাংশ) এবং রেগুলটর ৫টি বসানো শেষ হলেও একটি রেগুলেটরের ওয়ালে কিছু কাজ বাকি। কাজগুলো চলমান আছে। রেগুলেটরে ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ।’
প্রকল্প পরিচালকের প্রতিবেদন ও বক্তব্য উপস্থাপন শেষে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা দেশে বিভিন্ন বড় বড় কাজ করেছি। তবে এ প্রকল্পটি সবচেয়ে কঠিন। কেননা এ প্রকল্পে ১২ মাসের মধ্যে ৬ মাস কাজ চলে। এছাড়া প্রকল্পের ভূমির কাজ শেষ হওয়ার পরে আবার বেদখল হয়ে যায়। এ বিষয়ে অবশ্য সিডিএ আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে কিছু ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে দেখা যায়, ওখানে কবর আছে বা জংশন আছে। অথবা এমন কিছু আছে যেটির সঙ্গে আবেগ জড়িত।’
প্রকল্পের সুফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ যেহেতু শেষ হয়েছে, এ বছর থেকে সুফল মিলবে। সম্প্রতি অমাবস্যার জোয়ারের পানি আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকায় উঠেনি। কারণ মহেশখাল রেগুলেটর চালু করা হয়েছে। এবার বর্ষার আগে আমরা নগরবাসীর ভোগান্তি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।
আশা করি, ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে। তবে একটি বিষয় হলো, শহরে খালের সংখ্যা ৫৭টি। এরমধ্যে এ প্রকল্পে ৩৬টি খাল নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বাকি খালগুলোর প্রভাব এ খালগুলোতে পড়বে। তাই ওখানেও কতটুকু কাজ হচ্ছে তা দেখা প্রয়োজন। এছাড়া সম্প্রতি কথা ওঠেছে ৩৪টি খালের কোনো কোনো খালে মাটি জমে আছে। কিন্তু আমাদের জানামতে, কোথাও মাটি জমে নেই। যদি কোথাও মাটি থাকে আমাদের জানান। আমরা সঙ্গে সঙ্গে অপসারণ করবো।’
সংবাদ সম্মেলনে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘প্রকল্পটি ২০২৩ সালেও শেষ হচ্ছে না। মেয়াদ আরও দু’বছর বাড়ানো হতে পারে। তার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনের প্রক্রিয়া চলমান। তবে ব্যয় কতটুকু বাড়তে পারে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।’
শহরের বাকি ২১টি খালের অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খাল খনন ও আবর্জনা অপসারণের কাজ সিটি করপোরেশনের। আমি কাউন্সিলর থাকাকালীন দেখতাম এ কাজগুলো জুন মাসে হতো। মহিউদ্দীন চৌধুরী সাহেব মেয়র থাকাকালে প্রতিবছর আমাদের জুন মাসে ডেকে খাল খনন ও আবর্জনা সরানো প্রসঙ্গে আলোচনা করতেন এবং কাজ করতেন। এখনও নিশ্চয়ই সিটি করপোরেশন এ কাজ করবে। বাকি খাল ও নগরের ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করলে সমস্যা। এছাড়া সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড এ কাজ শেষ করার পর রক্ষণাবেক্ষণ কিন্তু তারা করবে না। যারা করবে তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।’
প্রসঙ্গত, চসিকের অধীনে থাকা ২১ খাল ও ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতার আশঙ্কার বিষয়টি জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হয় চসিকের বর্জ্য চসিকের ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও পশ্চিম ষোলশহর মো. মোবারক আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুধু ২১ খাল নয়। নগরীর সবক’টি খালে আর্বজনা অপসারণে ২৪৫ কোটি টাকার ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিছু খাল সিডিএ’র অধীনে থাকার পরও আমরা পরিষ্কার করছি, যেমন ত্রিপুরা খাল। সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগ, পরিচ্ছন্নতা বিভাগ এবং বাড়তি লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে আর্বজনা ভর্তি খাল-ড্রেন পরিষ্কার করা হবে। আর খালে বাঁধ আছে কি-না সেটা তদারকি করতে প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেমের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়েছে।’