কাঙ্ক্ষিত সুবিধা মিলছে না এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে

যানজট নিরসন, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ হলো, তখন নগরবাসী এক নতুন দিনের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, উদ্বোধনের বছর পেরোতেই প্রশ্ন উঠেছে: যে বিপুল অর্থ ও সময় ব্যয় করে এই উড়ালসড়ক তৈরি হলো, তার কাঙ্ক্ষিত সুফল কি আমরা পাচ্ছি?
​শুরুর প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। ধারণা করা হয়েছিল, এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে প্রধান সড়কগুলো যানজটমুক্ত হবে, কর্মঘণ্টা বাঁচবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়বে। বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে,
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বন্দর নগরীর যানজট নিরসনে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নিয়ে এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, উদ্বোধনের পরও নগরবাসী এই বিশাল অবকাঠামোর কাঙ্ক্ষিত সুফল থেকে এখনও বহুলাংশে বঞ্চিত। প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকার এই বিশাল বিনিয়োগের উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা এখন স্বাভাবিক।
​এক্সপ্রেসওয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত গতিতে যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করা এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট এড়ানো। কিন্তু আংশিক উদ্বোধনের পর দেখা যাচ্ছে, এর প্রবেশ ও বাহির পথগুলোই নতুন করে যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মূল সড়কে নেমে আসা বা এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার মুখে দীর্ঘ সারি তৈরি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ, সংযোগ সড়কগুলোর অপরিকল্পিত ডিজাইন এবং পর্যাপ্ত র‌্যাম্পের অভাব। পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে আসা যানবাহনগুলো জিইসি বা লালখান বাজার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে পারলেও, শহরের ভেতরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার সাথে এর সমন্বয় হয়নি। ফলস্বরূপ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে এবং সংযোগস্থলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
​অন্যদিকে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই আংশিক উদ্বোধন একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে। পুরোপুরি কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এবং নগরীর ট্র্যাফিক সিস্টেমের সাথে পুরোপুরি সমন্বয় না ঘটায়, এটি আপাতদৃষ্টিতে ‘দুর্ভোগের এক্সপ্রেসওয়ে’ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণকালীন সময়ে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি এখন যানজটের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমেনি। বরং কয়েকটি স্থানে তা বেড়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ ট্র্যাফিক পয়েন্টগুলোতে ফ্লাইওভার এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মিশ্রণ ট্র্যাফিকের প্রবাহকে আরও জটিল করে তুলেছে।
​প্রকল্পের সুফল নিশ্চিত করতে হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে হবে। বিশেষ করে লালখান বাজার অংশের সংযোগ এবং বহদ্দারহাটমুখী র‌্যাম্পগুলো দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। একই সাথে, ট্র্যাফিক পুলিশ এবং সিটি কর্পোরেশনকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশ ও বাহির পথগুলোর আশপাশে একটি সমন্বিত ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু নির্মাণ করলেই হবে না, এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা অত্যাবশ্যক। অন্যথায়, এই বিশাল অবকাঠামোটি বন্দরের অর্থনীতির জন্য বোঝা এবং নগরবাসীর জন্য এক দীর্ঘশ্বাস হয়েই থাকবে।